[email protected] সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

রাজশাহী প্রেসক্লাব দখলের ঘটনায় মামলা

মো: ইয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২৫, ২১:৩৩

সংগৃহিত ছবি

রাজশাহী প্রেসক্লাবে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গত বছরের ২৬ আগস্টের ঘটনায় রোববার (৬ জুলাই) নগরের বোয়ালিয়া থানায় এ মামলা হয়। সেদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমানকে ক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর কিছু সাংবাদিক রাজশাহী প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন।

এ ঘটনায় রোববার প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক মো. আল-আমিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- নজরুল ইসলাম জুলু (৫২), তাঁর দুই ছেলে নাঈমুল ইসলাম জন্ম (২২) ও নাজমুল ইসলাম জিম (৩২), মাসুদ আলী পুলক (৪২), পুটু বাবু (৪১) ও আজাহারুল ইসলাম বুলবুল (৩৮)। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম জুলু সাংবাদিক। তাঁর ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম এবং আত্মীয় মাসুদ আলী পুলকও নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকেন। অন্য তিনজন সাংবাদিক নন। জুলু ও জিম এখন কারাগারে।

জুলুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৫টি মামলা আছে। নতুন মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৬ আগস্ট সকালে আসামিরা প্রেসক্লাবে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি করেন। তারা লাঠিশোটা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, মামলার বাদী মো. আল-আমিনসহ সাধারণ সদস্যদের মারধর করেন।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ২৬ আগস্ট কিছু সাংবাদিক রাজশাহী প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেন। আগের সভাপতি সাইদুর রহমানকে প্রেসক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে সেদিনই একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে শ.ম সাজুকে আহ্বায়ক ও আমজাদ হোসেন শিমুলকে সদস্যসচিব করা হয়।

পরে অক্টোবরে তিন বছরের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। এতে শ.ম সাজু সভাপতি ও আহসান হাবিব অপু সাধারণ সম্পাদক হন। আর রোববারের মামলার প্রধান আসামি জুলু হন সিনিয়র সহসভাপতি। এরপর ডিসেম্বরেই ওই কমিটি পূণর্গঠন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন কমিটিতে নজরুল ইসলাম জুলু সভাপতি হন। পেশাদার সাংবাদিক না হলেও জুলুর ছেলে জিমকেও রাজশাহী প্রেসক্লাবের সদস্য করা হয়।

এদিকে জুলু রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিচ্ছিলেন। তবে প্রেসক্লাব দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন সাইদুর রহমান। তিনি নগরের জিরোপয়েন্টে পুরনো প্রেসক্লাবে যেতে না পারলেও গত ২৩ জুন শিরোইল পূর্বালী মার্কেটে রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যক্রম শুরু করেন। গত ৩০ জুন সেখান থেকেই জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক বার্তা পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুনকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।

গত ১ জুলাই এলাকার একটি বিরোধ নিষ্পত্তির সময় টিকাপাড়া বাসার রোড এলাকায় সিয়াম ইসলাম রাজ (১৯) নামের এক তরুণকে মারধর করা হয়। এ সময় সাকিব (২৪) নামের এক তরুণ পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও করেন। এ নিয়ে রাতে মামলা করেন রাজ।

পরদিন বুধবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরের খুলিপাড়া এলাকায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলাম জুলু, তাঁর ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম এবং মো. মনা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনা সম্পর্কে জুলুর ভাতিজা। তাদের রাজের করা মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামি হিসেবে পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। অস্ত্র উদ্ধারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়েছে।

এদের গ্রেপ্তারের পর রাজশাহী নগর পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র বহন, ধর্ষণ, জুয়া ও মারামারিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম জুলু এলাকায় অবৈধ প্রভাববিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত এবং তার ছত্রছায়ায় একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়ে আসছে। এছাড়াও জুলুর নেতৃত্বে রাজশাহী প্রেসক্লাব দখলসহ ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

জুলু গ্রেপ্তারের পর শনিবার রাতে রাজশাহী প্রেসক্লাবে ফেরেন সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুনসহ সাধারণ সদস্যরা।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর