পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের কম্পাউন্ডে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ভাঙারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে। শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় তার নিথর দেহ টেনে-হিঁচড়ে এনে রাস্তার মাঝখানে ফেলে দেওয়া হয় এবং তারপর তার ওপর চলে উন্মত্ততা ও নির্যাতন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, সোহাগকে কেবল হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি হামলাকারীরা। লাশের ওপর লাফানো, কিলঘুষি মারা, রক্তাক্ত মুখে আঘাত করার মতো ভয়ঙ্কর দৃশ্য ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। আশপাশে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ বাধা দিতে সাহস করেনি। ঘটনার সময় হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসাসেবা চলছিল এবং আনসার ক্যাম্পের সদস্যরাও কাছেই অবস্থান করছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মহিন ও তারেক নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহিনকে এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বাকি অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ‘সোহানা মেটাল’ নামের একটি দোকানের মাধ্যমে পুরনো বৈদ্যুতিক কেবল ও তামার তারের ব্যবসা করতেন। ওই এলাকার ভাঙারি ব্যবসার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছিল মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে আরও দুইজন। তারা সোহাগের কাছ থেকে ব্যবসার ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ দাবি করে, না হলে নিয়মিত চাঁদা দিতে বলেছিল। এর জের ধরেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত এবং পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে সোহাগকে তার দোকান থেকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে বেধড়ক মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, নিহত সোহাগ এবং হামলার নেতৃত্বদানকারী মহিন ও টিটুসহ অন্যরা ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে তাদের দলীয় পদ রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদারসহ আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
অত্যন্ত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি হাসপাতালের ভিতরে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং তা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতা নিয়ে জনমনে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে বহু মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: