২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে ৯৩ জন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক খসড়া তালিকায় এই তথ্য জানিয়েছে হেফাজত। তবে সংগঠনটি জানিয়েছে, এই সংখ্যা প্রাথমিক, অনুসন্ধান শেষে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
হেফাজতে ইসলামের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “প্রাথমিকভাবে ৯৩ জন শহীদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা হয়েছে। তালিকা এখনও চূড়ান্ত নয়, যাচাই-বাছাই চলছে।”
তালিকাটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন যুবক এবং কওমি মাদরাসার ছাত্র। তালিকায় প্রত্যেক শহীদের নাম, ঠিকানা, পরিবারের সদস্যদের নামসহ বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে, ২০১৩ সালের ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুদিন ধরে প্রচার হয়, সেদিন রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘হাজারের বেশি’ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। তবে এ পর্যন্ত কোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বা রাষ্ট্রীয় তদন্তে সে সংখ্যা নিশ্চিত হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট তাদের ফেসবুক পেজে ৬১ জন নিহতের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে। অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ২০২৫ সালের ২ মে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, “বিবিসির সাবেক ঢাকা প্রতিনিধি মার্ক ডামেটের সঙ্গে দুই সপ্তাহ মাঠে কাজ করে আমরা অন্তত ৫৮ জন নিহতের তথ্য পেয়েছিলাম। এদের মধ্যে সাতজন ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।”
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবিতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের আয়োজন করে। দাবিগুলোর মধ্যে ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন ও নারীনীতির বিরোধিতা অন্যতম ছিল। সমাবেশ শেষে হেফাজতের কর্মীরা রাতে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাত ৩টার দিকে যৌথভাবে অভিযান চালায়। সেসময় টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলির মাধ্যমে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাও অংশ নেন।
হেফাজতে ইসলামের এই ‘শহীদ তালিকা’ নতুন করে আবারও আলোচনায় এনেছে সেদিনের রাতের ঘটনাগুলো। যদিও এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত হয়নি বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ রয়েছে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: