চাঁদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যে আর্থিক অনুদানকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে তীব্র পারিবারিক দ্বন্দ্ব। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সহায়তা হিসেবে মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ৩০ শহীদ পরিবারের মধ্যে মোট ৫৯ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। কিন্তু অনুদান বিতরণকালে দেখা দেয় স্বজনদের মধ্যে Ownership নিয়ে উত্তেজনা ও বিরোধ।
অনুদান বিতরণের সময় অনেকেই নিজেদের হকদার হিসেবে দাবি তুলেন। বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা, মামা, এমনকি নানিও শহীদের পেছনে তাদের অবদান তুলে ধরে অর্থ পাওয়ার অধিকার দাবি করেন।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৬ বছর বয়সী কিশোর শাহাদাত হোসেন। শহীদের তালিকায় তার নাম উঠে এলে তার পরিবারের মধ্যেও দেখা দেয় অনুদান ঘিরে দ্বন্দ্ব। শাহাদাতের মা শিরতাজ বেগম ও নানি মমতাজ বেগম—দুজনেই অনুদানের টাকা পাওয়ার দাবিতে অবস্থান নেন।
শিরতাজ বেগম বলেন, “আমার ছেলে ছোটবেলায় তার নানির কাছে ছিল, তবে তার সমস্ত খরচ আমি চালিয়েছি। আন্দোলনে শহীদ হয়েছে আমার ছেলে। এখন সরকার টাকা দিলে আমার মা নিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এই টাকা আমার পাওয়ার কথা।”
অন্যদিকে, নানি মমতাজ বেগমের ভাষ্য, “নাতিকে কোলে-পিঠে আমি মানুষ করেছি। আমার কাছেই সে বড় হয়েছে। শহীদ হওয়ার পর ঠিকানায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে। এখন আমাকে টাকা দিলে আমার মেয়ে আপত্তি জানায়। এ কারণেই আমাদের দুজনকেই ডাকা হয়েছে।”
এ ধরনের দ্বন্দ্বের ঘটনা শুধু ফরিদগঞ্জেই নয়, হাজীগঞ্জ উপজেলার হটুনি গ্রামেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান। তার স্ত্রী বিবি হাওয়া মুক্তা জানান, “এখন পর্যন্ত আমি পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমার স্বামীর ভাই-বোনেরা এই টাকা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছেন। তারা ভাগ-বাটোয়ারা চাচ্ছেন, যার ফলে পরিবারে অশান্তি তৈরি হয়েছে।”
অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ স্বামী কিংবা ভাই হারিয়েছেন। আমরা বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছি, তবে এই অনুদান দিয়ে আপনাদের হৃদয়ের কষ্ট মোচন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে এমন অনেক অভিযোগ এসেছে যে, অনুদান নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। আজকেও অনুদান বিতরণের সময় এমন চিত্র দেখেছি। পরিবারের যিনি প্রকৃতভাবে প্রাপ্য, তিনি-ই অনুদান পাবেন। শহীদের তালিকায় নাম থাকলে—যদি স্বামী হন, স্ত্রী বা সন্তান অনুদান পাবে; যদি সন্তান হন, মা পাবেন। তবে যদি শহীদের ভরণপোষণ অন্য কেউ করে থাকেন, তা বিবেচনায় নিয়ে অনুদান বণ্টন করা হবে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব বা কলহের কোনো সুযোগ নেই।”
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: