ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে ভারতের জম্মু শহরে একাধিক বিস্ফোরণ ও সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। আতঙ্কে অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা শহর। ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম এবং বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, স্থানীয় বাসিন্দারা আকাশে সন্দেহজনক ড্রোন দেখতে পান।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, পাকিস্তান ওই রাতে ভারতের বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তবে ভারতের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করে। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সীমান্ত উত্তেজনার জেরে সরাসরি প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে। ধর্মশালায় অনুষ্ঠিতব্য আইপিএলের পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচটি মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট আচমকাই নিভে যায়, ফলে মাঠে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। নিরাপত্তাজনিত কারণে খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং দর্শকদের দ্রুত স্টেডিয়াম ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে পাঞ্জাব কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের পরবর্তী ম্যাচটি ধর্মশালা থেকে স্থানান্তর করে আহমেদাবাদে নেওয়া হয়েছে। বিসিসিআই জানিয়েছে, ধর্মশালার বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ায় ম্যাচ আয়োজন সম্ভব নয়। তবে বিদেশি খেলোয়াড়দের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এই ক্রীড়াবিশ্বে প্রভাব ফেলা উত্তেজনার পেছনে রয়েছে জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। মাসের শুরুতে কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো এক প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এরপর ‘অপারেশন সিন্ধু’-এর আওতায় ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায়। পাকিস্তান এই হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে অভিহিত করে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়, যার ফলে সীমান্তজুড়ে ড্রোন ও গোলাগুলি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এই উত্তেজনার ঢেউ পাকিস্তানেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের পাশে ভারতের একটি ড্রোন ধ্বংস করে পাকিস্তান। এর ফলে সেদিনের পিএসএল ম্যাচ বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিদেশি খেলোয়াড়রা নিরাপত্তা বিবেচনায় দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন।
বর্তমানে আইপিএল আয়োজক কমিটি নতুন করে ম্যাচসূচি পুনর্বিন্যাসের কাজ করছে এবং নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সীমান্তের উত্তেজনা এখন শুধু রাজনীতি নয়, খেলার মাঠেও সরাসরি প্রতিফলিত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: