মুসলমানদের ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের একটি হলো জায়নামাজ। ফারসি শব্দ ‘জায়নামাজ’-এর আরবি হলো ‘মুসাল্লা’। নামাজ আদায়ের জন্য জায়নামাজ ব্যবহার করা শর্ত নয়, তবে মেঝের ধুলাবালি থেকে বাঁচতে এবং আরাম পেতে অধিকাংশ মুসল্লি জায়নামাজ ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে শীতকালে টাইলস করা মসজিদগুলোতে জায়নামাজ বা বড় কার্পেট ছাড়া নামাজ আদায় করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
মহানবী (সা.)-এর আমল
হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবী (সা.) নিজেও নামাজে জায়নামাজ ব্যবহার করেছেন। তাঁর জায়নামাজটির নাম ছিল ‘খুমরাহ’। মাঝে মাঝে আয়েশা (রা.) নামাজের জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে দিতেন। এমনকি একবার আয়েশা (রা.) ঋতুবতী অবস্থায় জায়নামাজ আনতে দ্বিধা প্রকাশ করলে মহানবী (সা.) বলেন, “তোমার ঋতুস্রাব তো তোমার হাতে নয়।” (তিরমিজি, হাদিস : ১৩৪)।
শিল্প ও নকশায় বিকাশ
ইরাক ও ইরানে ইসলাম আগমনের আগে থেকেই কার্পেটশিল্পের বিকাশ ঘটে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় জায়নামাজশিল্প। মুসলিম কারিগরদের হাতে নকশা ও বুননে অনন্য কার্পেট ও জায়নামাজ তৈরি হয়, যা বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বিশেষ করে তুর্কি ও মিসরীয় জায়নামাজ নকশার জন্য বিখ্যাত।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি জায়নামাজ
২০০৯ সালে লন্ডনের সোথবিস নিলামঘরে ১৬–১৭ শতকের একটি প্রাচীন জায়নামাজ বিক্রি হয় ২৭ লাখ ২৯ হাজার ২৫০ পাউন্ডে—বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ কোটি! ধারণা করা হয়, সাফাভিদ দরবার থেকে ওসমানীয় সুলতান মুরাদ তৃতীয়কে শান্তিচুক্তির স্মারক হিসেবে এটি উপহার দেওয়া হয়েছিল। নিলামের আগে এর দাম ধরা হয়েছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাম দাঁড়ায় পূর্বাভাসের বিশ গুণ বেশি।
জায়নামাজ ব্যবহারে সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য জায়নামাজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। পবিত্র জায়গায় নামাজ আদায় করলেই তা কবুল হয়। দামি বা চমকপ্রদ নকশার জায়নামাজের বিশেষ কোনো ফজিলত নেই। বরং নকশা যদি মনোযোগ নষ্ট করে, তাহলে তা ব্যবহার না করাই ভালো। হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) একবার নকশাদার চাদরে নামাজ পড়ে মনোযোগ নষ্ট হওয়ায় সেটি ফিরিয়ে দিয়ে সাধারণ চাদর ব্যবহার করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৪০১)
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: