আজকের আধুনিক সমাজে পরিবার এক অচেনা আবহে ভেসে বেড়াচ্ছে। একসময় যে পরিবার ছিল শান্তি, ভালোবাসা ও আত্মিক সান্ত্বনার কেন্দ্র, সময়ের পরিক্রমায় তা রূপ নিচ্ছে টানাপোড়েন, বিবাদ ও বিচ্ছেদের দৃশ্যপটে। এর ফলে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক কলহ ও অবহেলায় ভুগছেন বাবা-মা। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে, আর বৃদ্ধরা একাকীত্বে জীবন কাটাচ্ছেন।
পবিত্র কোরআন পরিবারকে শান্তি, ভালোবাসা ও দয়ার কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে। আল্লাহ বলেন, “তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো; তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।” (সুরা রুম, আয়াত ২১)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।” (তিরমিজি, হাদিস ৩৮৯৫)।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভোগবাদী জীবনধারা, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার, অর্থনৈতিক চাপ, সন্তান লালন-পালনে অবহেলা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ পরিবার ভাঙনের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা: কোরআন স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের ‘পোশাকস্বরূপ’ ঘোষণা করেছে (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)।
মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব: তাদের প্রতি উত্তম আচরণকে আল্লাহ ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত করেছেন (সুরা ইসরা, আয়াত ২৩)।
সন্তানের লালন-পালন: হাদিসে বলা হয়েছে, প্রত্যেক অভিভাবক তার অধীনদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে (বুখারি, হাদিস ৭১৩৮)।
বিবাহ-বিচ্ছেদে সংযম: ইসলাম এটিকে বৈধ করলেও আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বৈধ কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে (আবু দাউদ, হাদিস ২১৭৮)।
পরিবার ভাঙন কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবসান নয়, বরং সমাজের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে। ইসলামের নির্দেশনা হলো ধৈর্য, ভালোবাসা, দায়িত্বশীলতা ও আল্লাহভীতির মাধ্যমে পরিবারকে সুদৃঢ় করা। নবী (সা.)-এর শিক্ষা বাস্তবায়ন করলে পরিবার আবারও হয়ে উঠতে পারে ভালোবাসা, মমতা ও শান্তির আশ্রয়স্থল।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: