[email protected] সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৪ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলামে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সংস্কৃতি : সুন্নাহ ও সামাজিক আচরণ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮

ফাইল ছবি

পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় মানবসমাজে সুপ্রাচীন রীতি। মুসলিম সমাজে যেমন, তেমনি সামাজিক ও প্রতিবেশী সম্পর্কের কারণে অমুসলিমদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো—এসব বিষয়ে ইসলামের সুন্নাহ বা সংস্কৃতি কী?

ইসলামে শুভ-অশুভ ধারণা

ইসলামে কুলক্ষণ বা অশুভ বলে কিছু নেই। বরং শুভ মানে কল্যাণ কামনা। নবী (সা.) বলেছেন, “ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি আর কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে শুভ লক্ষণ আমাকে আনন্দিত করে।” সাহাবিরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুভ লক্ষণ হলো উত্তম বাক্য।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৭৭৬)

ইসলামের শুভেচ্ছা রীতি

ইসলামে শুভেচ্ছা বিনিময়ের নানা রীতি রয়েছে—

১. তাহিয়্যা বা সালাম : মুসলমানদের পারস্পরিক শুভেচ্ছার মৌলিক রীতি। ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা এবং উত্তরে সমবাক্য বা আরো উত্তম উত্তর দেওয়া সুন্নাহ। (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৬)
২. মুসাফাহা বা হাত মেলানো : দুই মুমিন সাক্ষাতে হাত মেলালে আল্লাহ উভয়কে ক্ষমা করেন। (তিরমিজি, হাদিস ২৭২৭)
৩. মুআনাকা বা কোলাকুলি : সফর শেষে সাক্ষাতের সময় সাহাবিদের এই রীতি ছিল। নবী (সা.)-ও জাফর ইবনে আবি তালিবকে এভাবে বরণ করেছিলেন।
৪. তাকবিল বা চুম্বন : বিশেষ পরিস্থিতিতে কপালে চুম্বনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তবে অনাবশ্যক কোলাকুলি ও চুম্বন থেকে বিরত থাকতে বলেছেন অনেক আলেম।
5. তারহিব ও তাহলিল : ‘মারহাবা’, ‘আহলান সাহলান’, ‘সুবহানুল খাইর’ ইত্যাদি অভ্যর্থনার রীতি।
6. তাবাসসুম বা মুচকি হাসি : রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও সদকাহ।” (তিরমিজি, হাদিস ১৯৬২)
7. তাহনিয়া বা শুভকামনা : বিশেষ অর্জন বা নতুন জীবনের জন্য দোয়া ও শুভকামনা জানানো। নব-দম্পতির জন্য নবী (সা.)-এর দোয়া এর উদাহরণ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৯০৫)

অমুসলিমদের সঙ্গে শুভেচ্ছা

অমুসলিমদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ইসলামের বিশেষ দিকনির্দেশনা রয়েছে।

সালাম : মুসলিমদের নিজস্ব ইবাদত হওয়ায় অমুসলিমকে প্রথমে সালাম দেওয়া যাবে না। তবে তারা সালাম দিলে ‘ওয়া আলাইকুম’ বলা যাবে।

মুসাফাহা : অপ্রয়োজনে মাকরূহ, তবে অমুসলিম কেউ হাত বাড়ালে সাড়া দেওয়া অনুমোদিত।

সদাচরণ : নবী (সা.) বলেছেন, “যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো, মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।” (তিরমিজি, হাদিস ১৯৮৭)

উপসংহার

শুভেচ্ছা বিনিময় ইসলামে শুধুমাত্র সামাজিক প্রথা নয়, বরং ইবাদতের অংশ। সালাম, হাত মেলানো, মুচকি হাসি, দোয়া ও শুভকামনার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। একই সঙ্গে অমুসলিমদের সঙ্গেও সৌজন্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর