বর্তমান সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পাপের একটি হলো গিবত। এটি মানুষের অন্তরের এক ভয়ংকর রোগ, যা নেক আমল ধ্বংস করে দেয় এবং সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করে। কথার মাধ্যমে, ইশারা-ইঙ্গিতে, লেখালেখির মাধ্যমে কিংবা আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে গিবত ছড়িয়ে পড়ছে।
গিবতের সংজ্ঞা
গিবত হলো পরনিন্দা বা কুৎসা রটনা করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি আলোচনা করা কিংবা সমালোচনা করা। শারীরিক বৈশিষ্ট্য, অভ্যাস, চারিত্রিক দোষ বা পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করাও গিবতের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন— তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যা সে অপছন্দ করে, সেটিই গিবত। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তবে তা অপবাদ। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)।
গিবতের ভয়াবহতা
আল্লাহ তাআলা কোরআনে গিবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। (সুরা হুজরাত : ১২)। এক হাদিসে এসেছে, গিবতের একটি বাক্য যদি সাগরে ফেলা হয়, তবে তার পানির স্বাদ-গন্ধ পর্যন্ত পাল্টে যাবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)।
গিবত শোনার বিধান
গিবত করা যেমন পাপ, গিবত শোনাও পাপ। কেউ গিবত করলে তাকে থামাতে হবে, তা সম্ভব না হলে মজলিস ত্যাগ করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন— যখন তারা আমার আয়াত নিয়ে ঠাট্টা করে, তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। (সুরা আনআম : ৬৮)।
গিবতের শাস্তি
গিবতের কারণে আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। মেরাজের রাতে রাসুল (সা.) দেখেছেন, কিছু লোক নিজেদের নখ দিয়ে মুখ ও বুকে আঁচড়াচ্ছে—তাদের পরিচয় দেওয়া হয় গিবতকারী হিসেবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)।
গিবতের কাফফারা
গিবত হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে এবং যার গিবত করা হয়েছে তার জন্য দোয়া করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন— গিবতের কাফফারা হলো, গিবতকারী তার ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করবে। (বায়হাকি)।
কিয়ামতের দিনে গিবতের প্রতিফল
রাসুল (সা.) বলেছেন— অভাবী সেই ব্যক্তি, যে নামাজ, রোজা, জাকাত নিয়ে কিয়ামতের দিন আসবে; কিন্তু গালি, অপবাদ, অন্যের সম্পদ ভোগ ও দোষারোপের কারণে তার নেক আমল ভুক্তভোগীদের মধ্যে বণ্টন হয়ে যাবে। শেষে যদি কিছু না থাকে, তবে ভুক্তভোগীদের পাপ তার ওপর চাপানো হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: