[email protected] রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
২০ আশ্বিন ১৪৩২

রাসুল (সা.) ছিলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৬

ফাইল ছবি

মুয়াবিয়া ইবনুল হাকাম সুলামি (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলেন। এ সময় এক মুসল্লি হাঁচি দিলে তিনি অভ্যাসবশত তাকে বলেন, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন)।

এতে অন্য মুসল্লিরা তার দিকে তাকান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ কেন?” তখন সবাই তাদের উরুতে চাপড় মেরে ইঙ্গিত দেন, যেন তিনি চুপ থাকেন। তিনি বিষয়টি বুঝে নীরব থাকেন।

নামাজ শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলেন। মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, “আমার বাবা-মা তাঁর জন্য উৎসর্গিত হোন! তাঁর আগে বা পরে এমন শিক্ষক আমি দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে ধমক দেননি, মারেননি, গালিও দেননি। শুধু বলেছিলেন— ‘নামাজে কথাবার্তা বলা ঠিক নয়। নামাজে শুধু তাসবিহ, তাকবির ও কোরআন পাঠ করা হয়।’” (সহিহ মুসলিম)

হাদিস থেকে শিক্ষা ও প্রাসঙ্গিক বার্তা

রাসুল (সা.)-এর কোমলতা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি:
নবী করিম (সা.) ছিলেন আচরণে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। অজানা কারণে কেউ ভুল করলে তিনি কখনো রূঢ় আচরণ করতেন না, বরং ভালোভাবে বোঝাতেন। তাঁর নম্র আচরণে মানুষ ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হতো। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন,

“নম্রতা কোনো কিছুকে সুন্দর করে তোলে, আর কঠোরতা তা নষ্ট করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম)

নামাজে কথা বলা নিষিদ্ধ:
হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নামাজের মধ্যে কথা বলা বৈধ নয়। ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কথা বললে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি সালাম বা অন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করলেও নামাজ ভেঙে যাবে।

ইসলামী দাওয়াতে কোমল আচরণের প্রয়োজনীয়তা:
বর্তমানে অনেক ধর্মীয় বক্তা ও প্রচারক রূঢ় ব্যবহারে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেন। অথচ ইসলামের নবী (সা.) মানুষকে ভালোবাসা, নম্রতা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন।

নবীজির (সা.) শিক্ষা কীভাবে সহচরদের বদলে দিয়েছিল

মুয়াবিয়া ইবনুল হাকাম (রা.) রাসুলের (সা.) আচরণে গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নানা প্রশ্ন করেন—

“আমরা কেউ কেউ গণকের কাছে যাই,”
রাসুল (সা.) বলেন, “তুমি তাদের কাছে যেও না।”
“আমাদের কেউ কেউ শুভ-অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে।”
তিনি বলেন, “এগুলো মনগড়া বিষয়। এতে বিশ্বাস রেখে যেন কোনো ভালো কাজ থেকে বিরত না থাকো।”

আরেক ঘটনায় মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, তার এক দাসী বাঘে ছাগল খাওয়ায় রাগের বশে তিনি তাকে চড় মারেন। পরে নবীজির (সা.) কাছে বিষয়টি জানালে তিনি অসন্তুষ্ট হন। মুয়াবিয়া (রা.) জিজ্ঞেস করেন, “আমি কি তাকে মুক্ত করে দেব?” নবীজি (সা.) বলেন, “তাকে আমার কাছে আনো।”

তিনি দাসীকে এনে নবীজির (সা.) সামনে দাঁড় করান। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন,

“আল্লাহ কোথায়?”
সে বলে, “আকাশে।”
“আমি কে?”
সে বলে, “আপনি আল্লাহর রাসুল।”

তখন নবীজি (সা.) বলেন, “ওকে মুক্ত করে দাও, সে মুমিন।” (সহিহ মুসলিম)

এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন শুধু নবী নন, মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও আদর্শ প্রশিক্ষক।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর