সপ্তম শতাব্দীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই নন, বরং বিশ্বমানবতার মুক্তির বার্তাবাহক। ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি সমাজে ন্যায়, সাম্য, মানবাধিকার ও নৈতিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বিশ্ববিখ্যাত মনীষী টমাস কার্লাইল ১৮৪০ সালে এডিনবার্গে আয়োজিত এক সভায় মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলেন, “শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত দূতদের মধ্যেও নায়কের স্থান অধিকার করে রয়েছেন সুদূর আরবের হজরত মুহাম্মদ (সা.)।” তিনি আরও বলেন, এক অখ্যাত মরু জাতিকে নবীর আগমনে জগদ্বিখ্যাত জাতিতে পরিণত করেছিলেন তিনি—যাদের নেতৃত্বে গ্রানাডা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ইসলামী সভ্যতা বিস্তার লাভ করে।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নবী (সা.)-এর ভূমিকা নিয়েও বহু মনীষী শ্রদ্ধাভরে লিখেছেন। দার্শনিক পিয়েরে ক্রাবইট বলেন, “মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর ইতিহাসে নারী অধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন।” ডব্লিউ ডব্লিউ কেশের মতে, “প্রথমবারের মতো ইসলামই নারীদের মানবাধিকার দিয়েছে; মদ, জুয়া ও দেহব্যবসাকে নিষিদ্ধ করে সমাজে শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করেছে।”
জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড মান্টো বলেন, “চরিত্র গঠন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে মুহাম্মদ (সা.)-এর সাফল্য তাঁকে বিশ্বমানবতার মহান দরদি নেতায় পরিণত করেছে।” ইতিহাসবিদ গিবন লিখেছেন, “যে ঔদার্য ও ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্ত মুহাম্মদ (সা.) স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তার তুলনা নেই।”
রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয় নবী (সা.)-এর গুণমুগ্ধ হয়ে বলেন, “তাঁর আগমনের আগে পৃথিবী ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। তিনি সেই অন্ধকারে আলোর শিখা জ্বেলে মানবজাতিকে আলোকিত করেছেন।”
হিন্দু দার্শনিক স্বামী বিবেকানন্দ নবী (সা.)-কে অভিহিত করেছেন “সাম্য, মানবতা ও সৌভ্রাতৃত্বের মহান দূত” হিসেবে। আর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বলেন, “মানবতার ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনাময় জীবনশক্তি সঞ্চার করেছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি এনেছিলেন নিখাদ ও শুদ্ধ ধর্মাচরণের আদর্শ।”
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসুল। একজন প্রকৃত মুসলমানের জন্য তাঁর প্রতি ভালোবাসা নিজের জীবন, পরিবার ও সম্পদের চেয়েও গভীর হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, “নবী মোমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ।” (সুরা আহজাব, আয়াত ৬) এবং সতর্ক করেছেন, “যদি আল্লাহ, তাঁর রসুল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে তোমাদের প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, সন্তান, ধনসম্পদ ও বাসস্থান—তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর শাস্তির।” (সুরা তওবা, আয়াত ২৪)
রাসুল (সা.) নিজেও বলেছেন, “তোমাদের কেউ প্রকৃত মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে প্রিয় হই।” (সহিহ বুখারি)
সাহাবিদের জীবনে এ নবীপ্রেম বাস্তব সত্যে পরিণত হয়েছিল। তাঁরা নবীজির আদর্শে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন নিঃস্বার্থভাবে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ তাই আজও বিশ্বমানবতার জন্য অনুকরণীয় পথনির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, তাঁর আদর্শে জীবন গড়ার তৌফিক দান করেন—এই প্রার্থনাই সকল মুমিনের।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: