পবিত্র কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি চিরন্তন সত্য ও সার্বজনীন এক জীবনবিধান। এতে রয়েছে ঈমান, আমল, ন্যায়, নীতি, বিজ্ঞান ও ইতিহাসের সমন্বিত শিক্ষা। কোরআন শুধু অতীতের শিক্ষা নয়; বর্তমান ও ভবিষ্যতেরও পথনির্দেশ। তাই এটি শুধু পাঠের জন্য নয়, বরং চিন্তা, উপলব্ধি ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগের জন্যই নাজিল হয়েছে।
কোরআনের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. আল্লাহর বাণী হিসেবে কোরআন:
কোরআন মহান আল্লাহর বাণী, যা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর মানবজাতির পথনির্দেশ হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি কোনো মানুষের রচনা নয়; বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এক অলৌকিক গ্রন্থ।
২. কোরআন পাঠ এক ইবাদত:
কোরআন তেলাওয়াত করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। আল্লাহ তাআলা এর প্রতিটি অক্ষর পাঠের জন্য দান করেন অসীম সওয়াব। রাসুল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর পাঠ করবে, তার জন্য একটি নেকি থাকবে, আর প্রতিটি নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে।” (তিরমিজি, হাদিস: ২৯১০)
৩. নামাজে কোরআন তেলাওয়াত অপরিহার্য:
কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া নামাজ সম্পূর্ণ হয় না। নবী (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের কোনো অংশ পাঠ করে না, তার নামাজ নেই।” (বুখারি, হাদিস: ৭৫৬)
৪. কোরআন বিকৃতি থেকে নিরাপদ:
আল্লাহ নিজেই কোরআনের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেউ এর একটি অক্ষরও পরিবর্তন করতে পারে না।
“নিশ্চয়ই আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং অবশ্যই আমিই এর সংরক্ষণকারী।” (সুরা হিজর: ৯)
৫. কোরআন বিরোধ ও অসঙ্গতি থেকে মুক্ত:
“যদি এটি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসত, তবে তারা এতে অনেক বিরোধ দেখতে পেত।” (সুরা নিসা: ৮২)
৬. কোরআন মুখস্থ করা সহজ:
আল্লাহ তাআলা কোরআনকে মানুষের মুখস্থ করার জন্য সহজ করে দিয়েছেন।
“আমি অবশ্যই কোরআনকে স্মরণের জন্য সহজ করে দিয়েছি; অতএব আছে কি কেউ শিক্ষা গ্রহণকারী?” (সুরা কামার: ৪০)
৭. কোরআন এক অলৌকিক গ্রন্থ:
কেউই এর মতো একটি সুরা রচনা করতে সক্ষম নয়।
“অথবা তারা কি বলে, ‘তিনি এটি বানিয়েছেন?’ বলুন, ‘তাহলে তোমরা এর মতো একটি সুরা তৈরি করে দেখাও।’” (সুরা ইউনুস: ৩৮)
৮. কোরআন পাঠকারীর ওপর রহমত বর্ষিত হয়:
যেখানে কোরআন পাঠ হয়, সেখানে আল্লাহর প্রশান্তি ও বরকত নেমে আসে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)
৯. কোরআন সব মানুষের জন্য পথপদর্শক:
“যাতে তিনি মানুষকে সতর্ক করতে পারেন।” (সুরা ইউনুস: ৭০)
১০. কোরআন দেহ-মনের রোগের প্রতিকার:
“হে মানবজাতি! তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ, অন্তরের রোগসমূহের নিরাময় এবং এটি মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।” (সুরা ইউনুস: ৫৭)
১১. কোরআন কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে:
“তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো, কারণ কিয়ামতের দিন এটি তার পাঠকারীদের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৪)
১২. পূর্ববর্তী সব কিতাবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব:
“আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং তাদের ওপর মানদণ্ড হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।” (সুরা মায়িদা: ৪৮)
১৩. কোরআনের বার্তা সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ:
আল্লাহ যা বলেন তা চির সত্য, আর যা আদেশ করেন তা ন্যায়পরায়ণতা। (সুরা আরাফ: ১৫৭)
১৪. কোরআনের ঘটনাসমূহ বাস্তবিক:
“আমি তোমার কাছে মূসা ও ফেরাউনের কাহিনী সত্যভাবে বর্ণনা করছি।” (সুরা কাসাস: ৩)
১৫. কোরআন মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা:
জীবনের প্রতিটি বিষয়ে—ইমান, ইবাদত, লেনদেন ও সমাজজীবনে—কোরআনে রয়েছে পরিপূর্ণ নির্দেশনা।
“আমি কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দিইনি।” (সুরা আনআম: ৩৮)
পবিত্র কোরআন যুগে যুগে মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। রাসুল (সা.) বলেন,
“আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি; যতদিন তোমরা এগুলোর সাথে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকবে, কখনো পথভ্রষ্ট হবে না— (১) আল্লাহর কিতাব, (২) আমার সুন্নাহ।” (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস: ৮৯৯)
কোরআন শুধু মুসলমানদের নয়, সমগ্র মানবজাতির মুক্তির বার্তা ও জীবনপথের আলোকবর্তিকা।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: