[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন: ন্যায়, ইনসাফ ও কূটকৌশলে অনন্য দৃষ্টান্ত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫১

সংগৃহিত ছবি

ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পুরো জীবনকে সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত মানবতার কল্যাণ ও ন্যায়বিচারের আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে মদিনায় হিজরতের পর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে যে নীতি, আচার-ব্যবহার ও প্রশাসনিক দর্শন ফুটে উঠেছে— তা আজও রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনায় দৃষ্টান্তস্বরূপ।

মক্কায় নবুয়তপ্রাপ্ত সময়ে মনমানস গঠন ও প্রস্তুতি নেন নবী (সা.)। হিজরতের পর মাদানি জীবনে সেই প্রস্তুতির বাস্তবায়ন শুরু হয়—একটি পূর্ণাঙ্গ, ন্যায়ভিত্তিক ও চুক্তিনির্ভর শাসন ব্যবস্থার রূপায়ণ ঘটাতে।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও অর্থবোধ

মদিনায় হিজরতের পর নবীজি (সা.)-এর রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়; এখানে ইসলামকে কেবল ব্যক্তিগত ধর্ম নয়, বরং সার্বিক জীবন-বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি তিনি এগিয়ে নেন। মদিনা সনদ রচনা, বহুধর্মীয় ব্যবস্থায় নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, এবং সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর রাজনীতির মূল লক্ষ্য।

নবী (সা.)-এর রাজনৈতিক প্রধান বৈশিষ্ট্য

চারিত্রিক ও নৈতিক শক্তি: ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করে সর্বদা সর্বজন কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করা।

নিষ্কলুষ উদ্দেশ্য: রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তিগত স্বার্থের অনুসরণ না করে শুধুমাত্র ইসলামের বাস্তবায়নকে লক্ষ্য রাখা।

কলুষমুক্ত উপায়-উপকরণ: অসৎ পন্থা গ্রহণ না করে সত্য ও ন্যায়ের পথে রাজনীতি পরিচালনা; শত্রুদের প্রতিও মানবিকতা প্রদর্শন।

রাজনৈতিক দর্শন — সংক্ষেপে

আল্লাহর সার্বভৌমত্ব: শাসনের মূল কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহর—অতএব শাসনব্যবস্থা আল্লাহর হুকুম ও ন্যায়ের ওপর দাঁড়ায়।

ইনসাফভিত্তিক শাসনব্যবস্থা: সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা; শাসক-প্রজার মধ্যে বৈষম্য অপসারণ।

চুক্তিনির্ভর শাসন (মদিনা সনদ): বহুধর্মী সমাজে সকলের অধিকার সুরক্ষার মাধ্যমে লিখিত সংবিধানমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ: সাহাবীদের পরামর্শ নেবেন; পরামর্শ-সম্ভাষণে পরিচালিত নীতি গ্রহণ।

আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি ও কূটনীতি: বিভিন্ন দেশের শাসকদের কাছে আহ্বানপত্র প্রেরণ করে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও শান্তিপূর্ণ সম্বন্ধ গঠন।

প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধনীতি: যুদ্ধ শুধুমাত্র আত্মরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে; নারীবিপন্ন, শিশু ও বেসামরিকদের রক্ষা—যুদ্ধনিয়ন্ত্রণে মানবিক সীমাবদ্ধতা আরোপ।

দুর্বলদের অধিকার রক্ষা: এতিম, বিধবা, দরিদ্র ও অক্ষমদের সামাজিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় বিশেষ জোর।

উপসংহার

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাজনৈতিক জীবন কেবল ধর্মীয় নির্দেশনার প্রয়োগই নয়, বরং একটি সমন্বিত মানবতাভিত্তিক শাসন দর্শন। তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, পরামর্শপ্রধান মনোভাব, চুক্তিনির্ভর সংবিধান প্রয়োগ ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতা আধুনিক রাষ্ট্র-শাসন ও নৈতিক নেতৃত্বের জন্য আজও শিক্ষা ও রূপরেখা হিসেবে থেকে যায়।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর