[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

ইমানই মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ: ইমানের আলোয় আলোকিত জীবনই সফলতার চাবিকাঠি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৭

ফাইল ছবি

একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ইমান।

এটি আল্লাহপ্রদত্ত এক অমূল্য নিয়ামত ও সৌভাগ্যের বিষয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন—

“যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে এবং এর ওপর তার মৃত্যু হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহিহ বুখারি)

ইমানের প্রথম অংশ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’— অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। দ্বিতীয় অংশ ‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’— অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল, যার আনীত বিধিবিধান মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত পথনির্দেশ।

মানুষের ইহকাল ও পরকালের সফলতা নির্ভর করে এই ইমানের ওপর। ইমান ছাড়া কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন—

“শপথ সময়ের, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয় যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।” (সুরা আল-আসর)

ইমান ও সৎকর্মের সুসংবাদ
যারা ইমান আনে ও নেক আমল করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। আল্লাহ বলেন—

“নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে জান্নাতুল ফেরদাউসের অভ্যর্থনা; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সুরা কাহাফ : ১০৭-১০৮)

ইমানের শাখা-প্রশাখা
রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—

“ইমানের সত্তরোর্ধ্ব শাখা রয়েছে। প্রধান হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’; সবচেয়ে ছোট শাখা হলো রাস্তাঘাট থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা; আর লজ্জাশীলতা ইমানের একটি শাখা।” (সহিহ বুখারি, মুসলিম)

ইমানের এসব শাখা কোরআন-হাদিসে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। একজন মুসলমানের উচিত এসব শিক্ষা জেনে জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।

ইমানের স্বাদ
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—

“তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ইমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে—
১. আল্লাহ ও তাঁর রসুল তার কাছে সর্বাধিক প্রিয়।
২. সে কেবল আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালোবাসে বা ঘৃণা করে।
৩. ইমান থেকে প্রত্যাবর্তন করা তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও ভয়াবহ মনে হয়।” (সহিহ বুখারি, মুসলিম)

ইমানের প্রভাব ও দাবি
একজন প্রকৃত মুমিনের জীবনে ইমানের প্রতিফলন ঘটবে। সে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হবে, অন্য মুমিনদের প্রতি সহনশীল ও কল্যাণকামী হবে।

ইমানের প্রধান দাবি হলো শিরকমুক্ত একত্ববাদ (তাওহিদ)। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ সব ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। যেখানে ইমানের আলো থাকে, সেখানে শিরকের অন্ধকার থাকতে পারে না।

ইমান বনাম শিরক
শিরক হলো ইমানের বিপরীত। আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা মানে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা। মহান আল্লাহ বলেন—

“সত্য এসেছে, আর মিথ্যা বিলীন হয়েছে; নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলীন হওয়ারই যোগ্য।” (সুরা আল-ইসরা : ৮১)

হজরত ইবরাহিম (আ.) তৎকালীন সমাজের মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে আপসহীন প্রতিবাদ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আর রসুলুল্লাহ (সা.) কাবাঘর থেকে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণ করে তাওহিদের ভিত্তিতে পৃথিবীকে আলোকিত করেছিলেন।

ইমানের আলোয় আলোকিত জীবন
ইমান মানুষকে করে আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ, ধৈর্যশীল ও সত্যনিষ্ঠ। ইমানদার ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং একমাত্র তাঁর ওপর নির্ভর করে। ইমানই একজন মুমিনের জীবনের মূল শক্তি—যা তাকে ইহকালে শান্তি ও পরকালে জান্নাতের নিশ্চয়তা দান করে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর