প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ঘেরা পরিবেশে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছর পার করে পা দিয়েছে ৬০ বছরে। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর যাত্রা শুরু করা এ বিদ্যাপীঠ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি—এই চার বিভাগ এবং মাত্র সাত শিক্ষক, দুইশ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় চবির। প্রথম উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড. আজিজুল রহমান মল্লিক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদ, ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট, ৯২০ শিক্ষক ও প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য আছে ১৪টি আবাসিক হল।
গুণীজনের পদচারণায় সমৃদ্ধ চবি
উপমহাদেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক অনুপম সেনসহ বহু গুণীজন জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন এই বিদ্যাপীঠে।
শাটল ট্রেন: ইতিহাস ও বর্তমান
শিক্ষার্থীদের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি চবির ঐতিহ্য বহন করে আসছে। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ায় ভোগান্তি ও অব্যবস্থাপনা বেড়েছে। সম্প্রতি দুটি নতুন ট্রেন যোগ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সমাবর্তন
৫৯ বছরের ইতিহাসে চবিতে হয়েছে মাত্র ৫টি সমাবর্তন। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৫ সালের ১৪ মে। এতে প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
এবারের সমাবর্তনে ৪২ জন পিএইচডি, ৩৩ জন এমফিলসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ শিক্ষার্থী ডিগ্রি পান।
সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার
৫৬ হাজার ৭০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত চবির গ্রন্থাগার চট্টগ্রামের সবচেয়ে আধুনিক লাইব্রেরি। ৩০০ বই নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ লাইব্রেরিতে বর্তমানে রয়েছে সাড়ে ৩ লাখের বেশি সংগ্রহ। বিরল পাণ্ডুলিপি, জার্নাল, ব্রেইল বই, পুরোনো সাময়িকীসহ এখানে রয়েছে বিশাল আর্কাইভ। তবে শিক্ষার্থীদের হতাশার জায়গা—লাইব্রেরিতে বই নিয়ে প্রবেশ নিষেধ।
আন্দোলন-সংগ্রামের চবি
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান—সব ক্ষেত্রেই চবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ সদস্য শহীদ হন। তাদের স্মরণে ‘স্মরণ চত্বর’ নির্মিত হয়েছে।
চাকসু নির্বাচন
চবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত চাকসুর অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৭টি নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৫ অক্টোবর ২০২৫, যেখানে দীর্ঘ ৪৪ বছর পর নেতৃত্বে ফেরে ইসলামী ছাত্রশিবির।
চবির সংকট
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার মুখে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শাটল ট্রেনের অব্যবস্থাপনা
দীর্ঘমেয়াদি সেশনজট
প্রশাসনিক জটিলতা
হলের নিম্নমানের খাবার ও সীমিত আবাসন
লাইব্রেরির সীমাবদ্ধতা
পর্যাপ্ত পরিবহনের অভাব
এসব কারণে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
শিক্ষার্থীরা আশা করেন—
শাটল ট্রেন আধুনিকায়ন
সেশনজট দূরীকরণ
প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজীকরণ
হলের খাবার ও আবাসন সুবিধার উন্নয়ন
লাইব্রেরি ও পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ
জবাবদিহিমূলক প্রশাসন
৬০ বছরে পদার্পণের প্রাক্কালে শিক্ষার্থীরা একটি আধুনিক, সেবামুখী ও শিক্ষাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করছেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার গড়ে তোলার সুযোগ দেবে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: