চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে এক অটোরাইস মিল মালিকের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম ওরফে টি ইসলামের বিভিন্ন স্থাপনা ও সাইনবোর্ড ভাংচুর চালানো হয়েছে। এমনকি ভাংচুর করার পরেও মুঠোফোনে চাঁদার ৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিএনপি নেতা রমজান আলী। এনিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম।
অভিযোগকারী ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ী-নেতার কল রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের টোলঘর-নতুন ব্রীজ সড়কের টি ইসলাম চত্বরের দুই দিকে সাড়ে ৭ বিঘা জমি রয়েছে মিনার অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মোহা. তরিকুল ইসলামের। গত ২ মাস আগে সড়কের দুই ধারে পেট্রোল পাম্প ও আবাসিক ভবন টি ইসলাম টাওয়ার নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ড দেন ওই ব্যবসায়ী। এসময় স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ চক্র তরিকুল ইসলামের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
গত মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সারাদিনে টি ইসলাম চত্বরে নতুন করে স্থানীয়দের বসার জন্য সড়কের পাশে ইট দিয়ে নির্মিত ঢালাই সিট করেন ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে সাইনবোর্ড ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর চালায় চাঁদাবাজ চক্র। জেলা শহরের শিবতলা এলাকার গোলাব আলীর ছেলে রমজান আলী নিজেকে বিএনকি নেতা পরিচয় দিয়ে এই চাঁদা দাবি করেন বলে দাবি ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলামের। যদিও বিএনপিতে তার কোন পদ-পদবী বা পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ভাংচুরের পর ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম ও চাঁদাবাজির অভিযুক্ত ব্যক্তি রমজান আলীর একটি অডিও কথোপকথনে শোনা যায়, তরিকুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ভাংচুর করা হয়েছে কি না জানতে চান রমজান আলীর কাছে। জবাবে রমজান আলী বলেন, হ্যা টাকা না পেয়েই এমনটা করা হয়েছে। এখনই ৫ লাখ টাকা দিয়ে পাঠান। তরিকুল ইসলাম তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিনার অটো রাইস মিলে চাঁদার টাকা নিতে ডাকেন। এসময় টাকা নিতে আসছি বলে জানান রমজান আলী।
ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার নতুন করে নির্মাণ হওয়া সড়কের দুই ধারে আমার নিজস্ব সাড়ে ৭ বিঘা জমি রয়েছে৷ সেখানে দুই ধারে পেট্রোল পাম্প ও একটি বহুতল ভবন করার পরিকল্পনা করে কয়েকটি সাইনবোর্ড দেয়া মাত্রই দুই মাস আগে বিএনপি নেতা পরিচয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় আমার সাথে কয়েকজনকে নিয়ে দেখা করলে ২ হাজার টাকা দেয়। প্রথমে নিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে তা নিয়ে নেয়। এরপর সেখানে গত মঙ্গলবার বসার জায়গা করলে রাতে ভাংচুর চালানো হয়। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, ঘটনার ন্যায়বিচার পাব।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলাম ও সামশুল আলম জানান, মোড়ের উপরে টি ইসলাম তার নিজস্ব জায়গায় সাইনবোর্ড ও বসার জায়গা করেছে। মঙ্গলবার রাতে কে বা কারা এসে হঠাৎ ব্যাপক ভাংচুর চালায়। আমরা শুনেছি, তরিকুল ইসলামের কাছে নাকি চাঁদা না পেয়ে এমন ভাংচুর করেছি। এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই চুরি হয়, মোড়ে দোকানপাট ও লোকজন বসার জায়গা থাকায় অপরাধীদের বাধা হয়েছে।
এনিয়ে অভিযুক্ত রমজান আলী বলেন, ভাংচুর কে বা কারা করেছে তা আমার জানা নেই। তবে ভাংচুরের পর আমার বন্ধু ফোন দিয়েছে এমনটা ভেবে চাঁদা দাবি ও ভাংচুরের ঘটনা স্বীকার করি। আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। দলীয় পরিচয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপিতে আমার কোন পদ-পদবী নেই। তবে দলের কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনের অনুসারী বলে দাবি করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠান বলেন, আমি অডিও-ভিডিও রেকর্ডগুলো শুনেছি। সেখানে রমজান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদের অনুসারী বলে নিজেকে দাবি করেছেন। আমি হারুন ভাইয়ের প্রতি অনুরোধ করব, যেন এমন লোকজন প্রশ্রয় না দেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
তিনি আরও বলেন, রমজান আলীর বিএনপির কোন পদ-পদবীতে নেই। দলীয় পরিচয় দিয়ে কেউ কোন চাঁদাবাজি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট অভিযোগ দেয়ার অনুরোধ জানায়। এছাড়াও বিষয়টি দলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানোর অনুরোধ করছি। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে দলের অবস্থান জিরো টলারেন্স। যে বা যারা দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, চাঁদাবাজি ও ভাংচুরের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তকাজ শুরু করেছে পুলিশ। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আলোকিত গৌড়/এম.আর
মন্তব্য করুন: