ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, শহীদদের চেতনা ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা। তিনি বলেন, "এমন একটি সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখি যেখানে কেউ অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজি করবে না, জুলুম করবে না বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্যাতন চালাবে না। শহীদ ভাইয়াদের রক্তের দায়িত্ব আমরা পালন করব, ইনশাআল্লাহ।"
শুক্রবার (০৮ আগস্ট) রাজশাহীতে শহীদ আলী রায়হানের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, "আলী রায়হানের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িত। তিনি ছিলেন সহজ-সরল, ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি একনিষ্ঠ। শহীদদের পরিবারের সদস্যরা শুধু একটাই চান— তাদের প্রিয়জনের রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমরা কারও ভয় দেখি না, চোখরাঙানিকে গুরুত্ব দিই না।"
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "জুলাই ঘোষণাপত্র ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল, কিন্তু তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। রেমিটেন্স যোদ্ধা ও মিডিয়া কর্মীদের ভূমিকা উপেক্ষা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে সরকারকে হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।"
সাংবাদিক হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটি মর্মান্তিক ঘটনা। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার করা হোক, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।"
ছাত্রদলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, "জুলাই ইস্যুতে আমরা একমত। আদর্শগত ভিন্নতা থাকলেও সৌজন্য বজায় রাখা জরুরি। বক্তব্যে সংযম রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।"
শহীদ আলী রায়হানের পিতা মুসলেম উদ্দীন বলেন, "আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। আসামিরা এখনও মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে— তাদের ফাঁসি চাই।" শহীদ সাকিব আনজুমের পিতা মাইনুল হক বলেন, "স্বৈরাচার পতনের পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।"
জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, "আলী রায়হান ও সাকিবের রক্ত ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে।" সাবেক নেতা হাফেজ নুরুজ্জামান স্মরণ করেন, "আলী রায়হান ফজরের নামাজের জন্য শীতেও কম্বল ছাড়া ঘুমাতেন, যাতে সময়মতো উঠতে পারেন।"
অনুষ্ঠানে শহীদ আলী রায়হানের জীবননিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন "প্রত্যয় শিল্পী গোষ্ঠী" সঙ্গীত পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোকিত গৌড়/এম.আর
মন্তব্য করুন: