[email protected] বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
২৩ আশ্বিন ১৪৩২

পিআরের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে: মতিউর রহমান

মো: ইয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ২০:১৯

ছবি- আলোকিত গৌড়

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ৩১টির মধ্যে ২৬ দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তাই পিয়ারের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসেই হতে হবে। কনভেনশনাল সিস্টেম চালু থাকলে জামায়াত সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সংসদে আসবে। সমস্ত জরিপে দেখা যাচ্ছে জামাতের সমর্থন ক্রমবর্ধমান বাড়ছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর আয়োজনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মতিউর রহমান আকন্দ।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ১২টি নির্বাচন হয়ে গেছে, ১২ ধরনের নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংশোধন না হলে কোনো ধরনের সংস্কার মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, দুর্নীতিমুক্ত সেমিনার কার্যকর হবে না। জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন, সংস্কারের জন্য অনির্দিষ্টভাবে এখানে পিয়ার পদ্ধতির কথা বলা ছিল। প্রস্তাব কমিশন ৩১টি রাজনৈতিক দলের সামনে উপস্থাপন করেছেন। পরে বিস্তারিত আলোচনা করার পর বাংলাদেশের একত্রিশটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৬টি দল পিয়ারের পক্ষে মত দিয়েছে। ২৬টি দল পিআরের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।

আকন্দ বলেন, আমাদের রাজনীতি কোনো দলের জন্য বা ব্যক্তির জন্য না। শেখ হাসিনা বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান বিদায় নিয়েছে, সেটা অকার্যকর হয়ে গেছে। এখানে কি কোনো সংসদ নাই। এই সরকার কোনো সংবিধান ভিত্তিক হয় নাই। এ সরকার জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে এসেছে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি দল নির্বাচন আইনগত বৃত্তি না পায় চল করতে চাচ্ছেন। এছাড়া নির্বাচনের আগে জুলাই সনদে অবস্থান করতে হবে। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে।

জামায়াত নেতা বলেন, জুলাই সনদের গণভোট নভেম্বর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। আমাদের পাঁচ দফা আন্দোলনের অন্যতম হলো পিআর। এক সময় পিয়ার বিরোধীরা পিয়ারের জন্য আন্দোলন করবে কেয়ারটেকার সরকারের মত। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী গণহত্যাকারীদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।

সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, সকল ভোটারের মূল্যায়নে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে মনোনয়ন বাণিজ্য, রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, এবং কালো টাকার প্রভাব কমে যাবে। এছাড়া এ পদ্ধতিতে প্রত্যেক ভোটারের ভোটের প্রতিফলন সংসদে সঠিকভাবে ঘটে। একজন ভোটার যখন ভোট দেন, তিনি আশা করেন, তাঁর মত বা আদর্শের প্রতিনিধিত্ব সংসদে থাকবে।

বক্তারা আরও বলেন, জাতীয়ভাবে যদি কোনো দল ২০-২৫ শতাংশ ভোট পায়, কিন্তু তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা, বিত্তবৈভবের অভাব বা একক আসনে জেতার সক্ষমতা না থাকায় তারা একটি আসনও না পায়, তাহলে সেটি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অস্বাভাবিক বলেই বিবেচিত হয়। পিআর পদ্ধতিতে এই সমস্যাগুলোর অনেকটাই সমাধান হতে পারে। এখানে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের হার অনুসারে সংসদে আসন বরাদ্দ হয়। ফলে ছোট দল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, এমনকি নতুন রাজনৈতিক দলও সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়। এতে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য বাড়ে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের কণ্ঠস্বর সংসদে উঠে আসে।

আলোচনায় উঠে আসে বর্তমানে প্রচলিত ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতির নির্বাচনে যিনি শুধু সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন। যদি একটি নির্বাচনি এলাকায় কোনো প্রার্থী ৩৫ শতাংশ ভোট পান এবং বাকি ৬৫ ভাগ ভোট অন্যদের মধ্যে বিভক্ত থাকে, তবু তিনিই নির্বাচিত হন। এর মানে হচ্ছে, ৬৫ শতাংশ ভোটারের মতামত মূল্যায়িত হলো না। সে কারণে বিজয়ী দলের বা প্রার্থীর কাছে এই বিপুলসংখ্যক ভোটারের কোনো গুরুত্ব থাকে না।

সেমিনারে বিভিন্ন স্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীরা অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক ডা. নাজিব ওয়াদুদ। রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো. শাহাদত হোসাইন ও অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুলের যৌথ সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমীর ড. মাওলানা কেরামত আলী। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল। অন্যান্যের মাঝে আলোচনা রাখেন রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর এ্যাড. আবু সেলিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর মো. শরিফুল ইসলাম, রাজশাহী সদর-২ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর