রাজশাহী কলেজে উপাধ্যক্ষের কক্ষে সংঘটিত ধস্তাধস্তির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে। বুধবার (৮ অক্টোবর) কলেজ প্রশাসনের উপস্থিতিতেই ছাত্রদলের সভাপতি ও তার অনুসারীদের এহেন আচরণে কলেজজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
কলেজ হোস্টেলের এফ ব্লকের শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী রুহুল জানান তার নামে অফিশিয়ালভাবে হোস্টেলের সিট বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তাকে বারবার সিট ছাড়ার জন্য ছাত্রদল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গত ৮ অক্টোবর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজির’ অভিযোগ তুলে উপাধ্যক্ষের কক্ষে ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহিম আলী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর ড. সেরাজ উদ্দিন, ছাত্রদল সভাপতি আবিরসহ অনেকে।
রুহুলের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিল বাবদ টাকা চাওয়ার বিষয়টিকে ‘চাঁদাবাজি’ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। উপাধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করেই ছাত্রদল সভাপতি আবির ও তার সহযোগীরা তাকে মারতে তেড়ে আসে। “স্যাররা উপস্থিত না থাকলে হয়তো আজ আমি মার খেতাম,” বলেন রুহুল।
রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইব্রাহিম আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমার কক্ষে এমন ঘটনা ঘটবে, কল্পনাও করিনি। আমরা শিক্ষকরা বসে থাকা অবস্থায় ছাত্রদলের কর্মীরা এক শিক্ষার্থীকে মারতে উদ্যত হয়। আমরা তাকে রক্ষা করেছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।”
তবে ছাত্রদল সভাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির ভিন্ন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “ওই শিক্ষার্থী চাঁদা দাবি করেছিল, তাই তাকে ডাকা হয়। সেখানে সে উচ্চস্বরে কথা বললে আমরা প্রতিবাদ করি, কিন্তু মারামারি হয়নি।”
শিক্ষকদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার নেতৃত্বে উপাধ্যক্ষের রুমে এভাবে সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া কলেজের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এমন দুঃসাহস দেখানো আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। এটা স্পষ্টভাবে প্রশাসনিক শৃঙ্খলার অবমাননা।”
ঘটনার পর কলেজ প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। তবে শিক্ষকরা বলছেন, শুধুমাত্র তদন্ত নয়, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা নষ্ট করতে না পারে।
আলোকিত গৌড়/এম.আর
মন্তব্য করুন: