বিয়ে হয়েছিল প্রায় ৩ বছর আগে, রয়েছে ১ বছরের এক ছেলে সন্তান। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো স্ত্রী-শশুরের নামে করেছেন দুটি মামলা। এমনকি স্ত্রীর করা মামলায় সমাধানের শর্তে আদালতে জামিন নিয়ে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়।
নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে এক স্ত্রী থাকার পর আরেকটা বিয়ে করে। এমনভাবে তিনটি বিয়ে করেছেন ভুয়া ডাক্তার ইমরোজ আহমেদ সারুফ। এমন অবস্থায় চলতি বছরের গত ০৭ আগস্ট তার আগের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
এবার মামলার বাদি ভুক্তভোগী নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পিতৃত্ব নির্ণয়ের জন্য ওই শিশু ও ইমরোজ আহমেদ সারুফের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৭ আগস্ট) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম এই আদেশ দেন। আসামী ইমরোজ আহমেদ সারুফ সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাট হাজীপাড়া গ্রামের ফিরোজ কবিরের ছেলে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ সহচর।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী সারাবান তোহরার সন্তান ও ইমরোজ আহমেদ সারুফের ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান পরীক্ষককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি একটি পুলিশ দলের তত্বাবধানে একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে আদেশে। নমুনা পরীক্ষার পর ফলাফল আদালতে প্রদান করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বাদিপক্ষের আইনজীবী সাহিন কাদির বলেন, সারাবন তোহরার করা মামলায় আসামী ইমরোজ আহমেদ সারুফ সমাধান করে নেয়ার শর্তে জামিন নেয়। পরবর্তী সমাধান না করে উল্টো দুটি মিথ্যা মামলা দেয়। আদালতে আমরা বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হওয়ায় তার আগের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেসময় আমরা ইমরোজ আহমেদ সারুফ ও এক বছরের সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করে পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত ও নায্য অধিকার বুঝিতে দেয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছি৷ এর প্রেক্ষিতে আদালত বিচার-বিশ্লেষণ করে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন৷
মামলার বাদি সারাবান তোহরার বলেন, সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে আমাকেসহ একের পর এক তিনটি বিয়ে করেছেন ইমরোজ আহমেদ সারুফ। বিয়ের পর ভালোভাবেই সংসার চলছিল আমাদের। কিন্তু ৪ মাসের সন্তান থাকা অবস্থায় স্ত্রী সন্তানের স্বীকৃতি চাইতে গেলেই অস্বীকার করে যোগাযোগ বন্ধ করেন ইমরোজ। উল্টো দিতে থাকে নানারকম ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি। প্রথম বউকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল ইমরোজ আহমেদ সারুফ। একইভাবে এক মেয়েসহ দ্বিতীয় স্ত্রীকে রেখে আমাকে বিয়ে করে।
সারাবান তোহরার বাবা আবু বাক্কার বলেন, আমাকে যখন মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয় ইমরোজ আহমেদ সারুফ, তখন তাকে না করে দেয়। কিন্তু নানারকম কায়দা কানুন করে মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে মেয়েকে। বিয়ের পর দফায় দফায় কাবিননামা তৈরির কথা বলতে গেলেই মেয়েকে মারধর ও নির্যাতন করা হতো। আমাকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করে মহানন্দা ব্রীজের নিচে মরদেহ ফেলে দেয়ার হুমকি দেয় জামাই ইমরোজ আহমেদ সারুফ। স্ত্রী ও সন্তানের দাবিতে আদালতে মামলা করতে গেলে উল্টো আমাদের নামেই দুটি মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, আদালতের আদেশের ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে এবং ডিএনএ টেস্টের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, সারাবান তোহরার ১৪ মাসের ছেলের জন্ম নিবন্ধন ও টিকা কার্ডেও বাবার পরিচয় হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ইমরোজ আহমেদ সারুফের নাম
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: