কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবারও (১০ নভেম্বর) সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিও চলবে।
সোমবার সকালে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম নেতা মু. মাহবুবর রহমান বলেন, “আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি দুইটাই চলবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
এর আগে রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্মবিরতি ‘আপাতত স্থগিত’ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। মন্ত্রণালয় ও তথ্য অধিদপ্তর থেকেও একই তথ্য জানিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
তবে মধ্যরাতে সহকারী শিক্ষকদের তীব্র আপত্তির মুখে পরিষদের নেতারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তারা জানান, সহকারী শিক্ষকরা স্থগিতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হওয়ায় নেতৃত্ব পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন।
মু. মাহবুবর রহমান বলেন, “শিক্ষকরা আজকের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন। বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে আমরা বিদ্যালয়ে ফিরে যাবো, না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সোমবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল তাদের তিন দফা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, যা বিবেচনাধীন। তবে তারা এখন দশম গ্রেড চাইছেন। বিষয়টি বাস্তবসম্মত কি না, তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্যাখ্যা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্মবিরতি স্থগিত রাখবেন। এখন আবার কর্মবিরতিতে যাওয়া দুঃখজনক। আমরা আলোচনার পথ খোলা রেখেছি, তাই কর্মবিরতির প্রয়োজন নেই।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক, যাদের অধিকাংশই সহকারী শিক্ষক। এ বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৯৬ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।
কর্মবিরতির কারণে এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা ও বৃত্তি পরীক্ষা থাকায় শিখন ঘাটতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এমন সময়ে শিক্ষক আন্দোলন শুরু হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: