বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি, যার মাধ্যমে একটি পরিবারের সৃষ্টি হয়। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই এই প্রথা প্রচলিত। তবে অনেকেই বিয়ে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান বা অনিশ্চয়তায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল মানসিক অস্বস্তি নয়—বরং একটি মানসিক ব্যাধি, যার নাম গ্যামোফোবিয়া।
গ্রিক শব্দ ‘গ্যামো’ অর্থ বিয়ে এবং ‘ফোবিয়া’ অর্থ ভয়। অর্থাৎ গ্যামোফোবিয়া মানে বিয়ের প্রতি ভয় বা আতঙ্ক। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বৈবাহিক সম্পর্ককে হুমকিস্বরূপ মনে করেন।
গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত কেউ বিয়ের প্রসঙ্গ শুনলেই বা সম্পর্কের প্রস্তাব এলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া দেখান। এর মধ্যে থাকে—অস্থিরতা, বুকে ব্যথা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, আতঙ্ক, চিন্তায় অস্বচ্ছতা, মাথাব্যথা, হঠাৎ রাগ, ঘাম, তৃষ্ণা, এমনকি শরীর কাঁপা পর্যন্ত।
এছাড়া বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে অনেকেই হঠাৎ করে সম্পর্ক থেকে সরে যেতে চান বা অস্বাভাবিক আচরণ করেন। ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে তারা ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এর শিকার হন এবং ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন।
গ্যামোফোবিয়ার কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতের মানসিক আঘাত বা ব্যর্থ সম্পর্ক, পারিবারিক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিচ্ছেদ বা সম্পর্কের অবিশ্বাস গ্যামোফোবিয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া উদ্বিগ্ন ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিরা মনে করেন, বিয়ে করলে স্বাধীনতা হারাতে হবে—এ ধারণা থেকেও ভয় তৈরি হয়। তাছাড়া সামাজিক চাপ ও বিয়ের প্রত্যাশা থেকেও মানসিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।
যেভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত
যদি প্রতিশ্রুতি দিতে ভয় পান, সম্পর্ক থেকে পালাতে ইচ্ছা হয়, বিয়ের পর স্বাধীনতা হারানোর আশঙ্কা থাকে, বা সম্পর্ককে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার কারণ মনে হয়—তাহলে আপনি গ্যামোফোবিয়ায় ভুগতে পারেন। এতে শারীরিকভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘাম, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ও করণীয়
গ্যামোফোবিয়া কাটিয়ে উঠতে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পাড়া-প্রতিবেশী বা বন্ধুর পরামর্শ যথেষ্ট নয়। চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) এবং অন্যান্য চিকিৎসা দিতে পারেন। পাশাপাশি ধ্যান, নিয়মিত ব্যায়াম ও সাপোর্ট গ্রুপে অংশগ্রহণ করাও উপকারী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেখানে একই ধরনের ভয় থাকা মানুষজন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, সেখানে অংশ নিলে মানসিক সাহস পাওয়া যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সঙ্গী ও পরিবারের সঙ্গে নিজের ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: “গ্যামোফোবিয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা।”
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: