আজকের ব্যস্ত নগরজীবনে প্রতিদিনই মানুষ দৌঁড়ে চলছে—সকালে অফিস, বিকেলে যানজট, রাতে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় ফেরা। এই চক্রে নিজের মনকে শান্ত করার মতো সময়ই যেন খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ক্লান্তি ধীরে ধীরে জমে গিয়ে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে দিচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চাপ কমাতে আমাদের আশপাশের সবুজ গাছপালা নীরবে কাজ করছে কার্যকর প্রাকৃতিক থেরাপি হিসেবে।
শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ফুলে ভরা কোনো গাছের দৃশ্য, কিংবা অফিসের টেবিলে রাখা ছোট্ট গাছের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তের জন্য মনটা হালকা হয়ে যাওয়া—এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে গাছ ও সবুজ প্রকৃতি মানুষের মানসিক শান্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় যা জানা গেছে
জাপানের চাইবা ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরের ভেতরে গাছের সঙ্গে সময় কাটালে সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের কার্যকারিতা কমে, ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং মন আরও শান্ত হয়। অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, গাছের যত্ন নেওয়ার সময় তারা কম্পিউটারের সামনে কাজ করার চেয়ে অনেক বেশি ‘রিল্যাক্সড’ অনুভব করেছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের ৪২টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইনডোর গাছপালা মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও নেতিবাচক অনুভূতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি ছোট জায়গায় অল্প কিছু গাছ থাকলেও তার প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়।
আরেকটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা বা পানি দেওয়ার মতো সাধারণ কাজও আমাদের স্নায়ুকে শান্ত করে এবং মনকে প্রশান্তি দেয়।
বাস্তব উদাহরণ
সাভারের বাসিন্দা ফারজানা রহমান কয়েক বছর ধরে নিজের ছাদে ছোট্ট একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। সেখানে ফুল, ঔষধি গাছ ও সবজি মিলিয়ে তৈরি হয়েছে সবুজ এক জগৎ।
তিনি বলেন, “প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে গাছে পানি দিই, একটু সময় তাদের সঙ্গে থাকি। এই সময়টুকু আমার নিজের জন্য। মনে হয়, সব চিন্তা দূর হয়ে যাচ্ছে।”
তার অভিজ্ঞতা একক নয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এখন অনেকেই ছাদে বা বারান্দায় ছোট করে গাছ লাগাচ্ছেন—কেউ সৌন্দর্যের জন্য, কেউ সবজি চাষে, আবার কেউ মানসিক প্রশান্তি খুঁজতে।
বিশেষজ্ঞদের মত
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সবুজ রং নিজেই এক ধরনের ‘ক্যালমিং কালার’ বা শান্তির রঙ। তাই গাছের উপস্থিতি শুধু চোখের আরামই নয়, মস্তিষ্কের শিথিলতারও উৎস।
অফিস, হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—যেখানেই গাছপালা যুক্ত করা হচ্ছে, সেখানেই দেখা যাচ্ছে মানসিক চাপ কমছে, উৎপাদনশীলতা বাড়ছে এবং পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। অনেক দেশেই এখন “গ্রীন থেরাপি” বা “হর্টি-কালচার থেরাপি” মানসিক স্বাস্থ্যচর্চার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকের এই ব্যস্ত, যান্ত্রিক জীবনে গাছপালা হতে পারে এক সহজলভ্য প্রাকৃতিক ওষুধ। ঘরের কোণে, অফিসের টেবিলে বা ছাদে কিছু গাছ লাগিয়ে প্রতিদিনের ক্লান্তি ও উদ্বেগের মাঝেও পাওয়া যেতে পারে একটু শান্তির পরশ।
হয়তো সেই ছোট-বড় গাছগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে আপনার দিনের সবচেয়ে প্রশান্ত মুহূর্ত।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: