বিয়ের পর ভালোবাসার সম্পর্ক বদলে গেছে—এমন অভিযোগ করেন অনেক দম্পতি। বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে অনেক সময় সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ে, এমনকি বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। তবে সম্পর্কবিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু সচেতন হলে এই সমস্যার অনেকটাই শুরুতেই সমাধান করা সম্ভব।
বাটারফ্লাই ম্যাট্রিমনিয়ালের সম্পর্কবিষয়ক পরামর্শক হুরায়রা শিশির বলেন, বিয়ের পর এমন অভিযোগ তখনই বাড়ে, যখন সঙ্গীরা একে অপরকে আগের মতো আকর্ষণ করার চেষ্টা বন্ধ করে দেন। বিয়ের আগে যে অতিরিক্ত যত্ন, রোমান্টিক আচরণ ও ভালোবাসার প্রকাশ দেখা যায়, বিয়ের পর তা অনেক ক্ষেত্রে কমে আসে। এতে অনেকের মনে হয়, আগের মতো আর ভালোবাসা নেই।
তিনি বলেন, বিয়ের পর ভালোবাসা প্রকাশের ধরনে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তনকে ভালোবাসা কমে যাওয়া বলে ভুল বোঝেন। সম্পর্কের শুরুতে মানুষ নিজের সেরা দিকটাই তুলে ধরে, ফলে ভালোবাসা প্রকাশ পায় রোমান্টিক আচরণে। বিয়ের পর সেই ভালোবাসাই প্রকাশ পায় দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একসঙ্গে খাওয়ার পর বাসন ধুতে সাহায্য করা, কাপড় গুছিয়ে দেওয়া, ক্লান্ত সঙ্গীর জন্য খাবার তৈরি করা—এই সাধারণ কাজগুলোর মধ্যেই বিয়ের পরের ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।
হুরায়রা শিশির বলেন, ‘বিয়ের পর ভালোবাসা আগের মতো নেই’—এমন অভিযোগ করার আগে বরং দেখুন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গী আপনার জন্য কী করছে। ভালোবাসার প্রকাশ বদলালেও অনুভূতি যে বদলে যায়, তা নয়।
ভালোবাসার পাঁচটি ধাপ
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রায় সব দম্পতিই ভালোবাসার পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করেন।
প্রথম ধাপ হলো প্রেমে পড়া। এই সময় সবকিছুই রোমান্টিক মনে হয়, সঙ্গীর সামান্য আচরণও আনন্দ দেয়।
দ্বিতীয় ধাপে তৈরি হয় বিশ্বাস। এই পর্যায়ে সঙ্গীর ওপর ভরসা করা যায় কি না, তা যাচাই হয়।
তৃতীয় ধাপে এসে বাস্তবতা সামনে আসে। ভালোবাসা নাকি মোহ—এই পার্থক্য বোঝা যায় এবং তথাকথিত ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ হয়।
চতুর্থ ধাপে দম্পতি একসঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করতে শেখেন। ভুল–বোঝাবুঝি কাটিয়ে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলে।
পঞ্চম ধাপে নানা ঘাত–প্রতিঘাত পেরিয়ে ভালোবাসা আরও দৃঢ় ও গভীর হয়। যত্ন ও দায়িত্বের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক পরিণত রূপ পায়।
তাড়াহুড়ো সিদ্ধান্তে ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রেমের শুরুতে শরীরে নানা রাসায়নিক পরিবর্তন হয়, যা অনুভূতিকে তীব্র করে তোলে। এই অনুভূতিকে স্থায়ী ভেবে দ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, এই তীব্র অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী নয়।
তাঁরা বলেন, বিয়ের পর আগের মতো অতিরিক্ত রোমান্টিকতা না থাকাই স্বাভাবিক। বাস্তবতা, দায়িত্ব, অর্থনৈতিক চাপ ও পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যেই তখন সত্যিকারের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নেওয়া, একে অপরের প্রতি সম্মান ও যত্নবান থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসা সময়ের সঙ্গে বদলায়—এই বাস্তবতাকে মেনে নিতেই গড়ে ওঠে সুখী দাম্পত্য।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: