ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন রসায়নবিদ ওমর এম. ইয়াগি এবার নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস ঘোষিত ফলাফলে জানা যায়, জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া ও যুক্তরাজ্যের রিচার্ড রবসনের সঙ্গে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তিনি। ধাতু-জৈব কাঠামো (Metal-Organic Frameworks - MOFs) উদ্ভাবনের জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমির ব্যাখ্যায় বলা হয়, তাদের উদ্ভাবিত এই নতুন ধরনের আণবিক কাঠামো এমন এক বৈপ্লবিক প্রযুক্তির দ্বার খুলে দিয়েছে, যার মাধ্যমে গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পরিবেশবান্ধব এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কে এই ওমর এম. ইয়াগি?
১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ওমর মওয়ানেস ইয়াগি। শৈশবে দারিদ্র্য ও সীমিত সুযোগের মধ্যে বেড়ে ওঠা ইয়াগি মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান বাবার পরামর্শে। তিনি হাডসন ভ্যালি কমিউনিটি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানি (SUNY) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় থেকে পিএইচডি (১৯৯০) সম্পন্ন করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের ফেলো হিসেবে কাজ করেন।
বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের জেমস ও নেলজে ট্রেটার প্রফেসর অব কেমিস্ট্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া মলিকুলার ফাউন্ড্রি, কাভলি এনার্জি ন্যানোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও বাকার ইনস্টিটিউট অব ডিজিটাল ম্যাটেরিয়ালস ফর দ্য প্ল্যানেটের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বে রয়েছেন।
২০২১ সালে সৌদি রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে তিনি সৌদি নাগরিকত্ব লাভ করেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস ও জার্মান ন্যাশনাল একাডেমি লিওপোল্ডিনার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৫ সালে তিনি কার্নেগি কর্পোরেশন অব নিউ ইয়র্কের "গ্রেট ইমিগ্র্যান্ট অ্যাওয়ার্ড" অর্জন করেন।
নোবেল পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ওমর বলেন,
“আমার বাবা-মা পড়তে বা লিখতে পারতেন না। এটি ছিল কঠিন এক যাত্রা, কিন্তু বিজ্ঞানই আমাকে এই যাত্রা সম্পূর্ণ করার সুযোগ দিয়েছে।”
নোবেলজয়ী মুসলমানদের তালিকা
এ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পাওয়া মুসলমানের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ জন। তারা হলেন—
আনওয়ার সাদাত (১৯৭৮, শান্তি), আবদুস সালাম (১৯৭৯, পদার্থবিজ্ঞান), নাগিব মাহফুজ (১৯৮৮, সাহিত্য), ইয়াসির আরাফাত (১৯৯৪, শান্তি), আহমেদ জেওয়াইল (১৯৯৯, রসায়ন), শিরিন এবাদি (২০০৩, শান্তি), মোহাম্মদ ইলবারাদেই (২০০৫, শান্তি), মুহাম্মদ ইউনূস (২০০৬, শান্তি), ওরহান পামুক (২০০৬, সাহিত্য), তাওয়াক্কুল করমান (২০১১, শান্তি), মালালা ইউসুফজাই (২০১৪, শান্তি), আজিজ সানকার (২০১৫, রসায়ন), আবদুলরাজাক গুরনাহ (২০২১, সাহিত্য), মৌঙ্গি বাওয়েন্দি (২০২৩, রসায়ন), নার্গেস মোহাম্মাদি (২০২৩, শান্তি) এবং সর্বশেষ ওমর এম. ইয়াগি (২০২৫, রসায়ন)।
সূত্র: নোবেল কমিটি, উইকিপিডিয়া
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: