[email protected] বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৩১ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে গঠিত হলো দুটি পৃথক বিভাগ: কাঠামোগত সংস্কারের বড় পদক্ষেপ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৫, ২১:২০

ফাইল ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এটি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার, যার লক্ষ্য রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা থেকে নীতিনির্ধারণ কার্যক্রমকে পৃথক করে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর দীর্ঘদিন ধরেই কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। বিশ্বব্যাপী এই অনুপাত গড়ে ১৬.৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় ১১.৬ শতাংশ। দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করা জরুরি।

সরকার মনে করছে, এনবিআরের কাঠামো পুনর্গঠন ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। একক প্রতিষ্ঠান দ্বারা কর নীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পরিচালিত হলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, যার ফলে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদ্যমান করনীতি রাজস্ব সংগ্রহে অতিরিক্ত মনোযোগী হলেও ন্যায্যতা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দিক থেকে দুর্বল।
পুরনো কাঠামোর ফলে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ওপর কোনো সুনির্দিষ্ট জবাবদিহি ছিল না। কর্মদক্ষতা যাচাইয়ের মানদণ্ড বা প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়ন ব্যবস্থার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই কর আদায়ে গাফিলতি দেখা গেছে। অনেক কর্মকর্তা কর খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের সঙ্গে আপোস করেছেন বা সহায়তা করেছেন।

এনবিআরের আরেকটি বড় দুর্বলতা ছিল এর ধীরগতি। নীতি প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ একসঙ্গে থাকার ফলে কর আহরণের পরিধি বাড়েনি। কর প্রশাসনের দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং আইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়েছে।

নতুন কাঠামোর আওতায়, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক চুক্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। অপরদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নীতির কার্যকর প্রয়োগ ও তদারকি করবে। এর ফলে কর নির্ধারণকারী ও কর আদায়কারী কর্তৃপক্ষ পৃথক থাকবে, যা যোগসাজশ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমাবে।
এই পৃথকীকরণ প্রতিটি বিভাগের মধ্যে স্পষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ করবে এবং পেশাগত দক্ষতা বাড়াবে। এর মাধ্যমে কর ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে কর-নেট সম্প্রসারণ সহজ হবে এবং পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীলতা কমবে।

নতুন রাজস্ব নীতি বিভাগ ভবিষ্যতমুখী ও উন্নয়নমুখী নীতিমালা প্রণয়নে সক্ষম হবে, যা স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব আদায়ের বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেবে। পাশাপাশি, পেশাদার কর প্রশাসনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারি খাতের দীর্ঘদিনের অভিযোগও হ্রাস পাবে।

সরকার বলছে, এটি কেবল একটি প্রশাসনিক রদবদল নয়, বরং একটি ন্যায্য, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে কর ব্যবস্থার এই সংস্কার সময়োপযোগী এবং অপরিহার্য।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর