সুরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “এই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত।” (সুরা বাকারা: ২) অর্থাৎ, কোরআনে মুত্তাকিদের জন্য দিকনির্দেশনা রয়েছে—যা তাদের পার্থিব ও পরকালীন সফলতার পথ দেখায়।
অন্যদিকে একই সুরায় রোজার ফরজিয়তের প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “এটি মানুষদের জন্য হেদায়াত।” (সুরা বাকারা: ১৮৫)
এই দুটি আয়াতের ভাষায় দেখা যায়—এক জায়গায় হেদায়াতকে মুত্তাকিদের জন্য সীমিত করা হয়েছে, আর অন্য জায়গায় বলা হয়েছে সব মানুষের জন্য। ফলে সাধারণ পাঠকের কাছে এটি বিরোধপূর্ণ মনে হতে পারে।
তবে কোরআনের ব্যাখ্যাকার ও ইসলামী আলেমগণ বলেন, এখানে কোনো বিরোধ নেই। বরং এই দুই আয়াতে “হেদায়াত” শব্দটি দুই ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
হেদায়াতের দুই অর্থে কোরআনের ব্যাখ্যা
১. হেদায়াত অর্থ: সঠিক পথ দেখানো ও আহ্বান করা
এই অর্থে হেদায়াত মানে হলো—মানুষকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেওয়া, সত্যের দিকে আহ্বান জানানো।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
“প্রত্যেক জাতির জন্য একজন হেদায়াতকারী রয়েছে।” (সুরা রা’দ: ৭)
এখানে নবী ও দাঈদের হেদায়াতকারী বলা হয়েছে, কারণ তারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করেন।
আরেক আয়াতে আল্লাহ নবীকে বলেন,
“তুমি নিশ্চয়ই সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করো।” (সুরা শুরা: ৫২)
অর্থাৎ রাসুল (সা.) মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করেছেন—এটাই সাধারণ হেদায়াত।
২. হেদায়াত অর্থ: তওফিক দেওয়া ও সঠিক পথে স্থির রাখা
দ্বিতীয় অর্থে হেদায়াত মানে হলো—মানুষের অন্তরে ঈমানের আলো জাগিয়ে তোলা এবং সত্যের পথে অবিচল থাকার তওফিক দেওয়া। এটি শুধুমাত্র আল্লাহর হাতেই।
আল্লাহ বলেন,
“তুমি যাকে ভালোবাসো, তাকে হেদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহ যাকে চান, তাকেই হেদায়াত দেন।” (সুরা কাসাস: ৫৬)
এই হেদায়াতই প্রকৃত বা বিশেষ হেদায়াত, যার মাধ্যমে মানুষ ঈমান গ্রহণ করে ও মুত্তাকিদের পথ অনুসরণ করে।
হেদায়াতের দুই প্রকার: সাধারণ ও বিশেষ
১. সাধারণ (বা ব্যাপক) হেদায়াত
এটি হলো সঠিক পথ দেখানো—সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করা।
যেমন আল্লাহ বলেন,
“আমি তাকে দুইটি পথের হেদায়াত দিয়েছি।” (সুরা বালাদ: ১০)
অর্থাৎ ভালো ও মন্দ—উভয় পথ মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২. বিশেষ হেদায়াত
এটি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তওফিক ও অন্তরের প্রশান্তি দান, যার মাধ্যমে বান্দা সত্যের পথে অটল থাকে।
আল্লাহ বলেন,
“যাকে আল্লাহ হেদায়াত দিতে চান, তার বুক ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রশস্ত করে দেন।” (সুরা আন’আম: ১২৫)
দ্বন্দ্ব নয়, বরং পরিপূরক ব্যাখ্যা
এই ব্যাখ্যা জানার পর বোঝা যায়—সুরা বাকারার দুই আয়াতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
প্রথম আয়াতে “মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত” মানে বিশেষ হেদায়াত—যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।
আর দ্বিতীয় আয়াতে “মানুষদের জন্য হেদায়াত” মানে সাধারণ হেদায়াত—অর্থাৎ সত্যের পথের দিকনির্দেশনা, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত।
একইভাবে, আল্লাহ নবীকে বলেছেন,
“তুমি যাকে ভালোবাসো, তাকে হেদায়াত দিতে পারো না।” (সুরা কাসাস: ৫৬)
অন্যদিকে বলেছেন,
“নিশ্চয়ই তুমি সঠিক পথের হেদায়াত দাও।” (সুরা শুরা: ৫২)
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে বিশেষ হেদায়াত কেবল আল্লাহর হাতে, আর দ্বিতীয় আয়াতে নবীর মাধ্যমে সাধারণ হেদায়াত—অর্থাৎ সত্যের পথ দেখানো—বর্ণনা করা হয়েছে।
সূত্র: ইসলাম ওয়েব
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: