আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানা পরিচয়ে সৃষ্টি করেছেন—বংশ, বর্ণ, এলাকা, পেশা, ভাষা, রাজনীতি, বিশ্বাস ও আদর্শসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে। এসব সম্পর্কের ভিত্তিতে মানুষ একত্রিত হয়, আবার কখনও বিভক্তও হয়। তবে কোরআন-হাদিসের আলোকে মানুষের মৌলিক সম্পর্কের ভিত্তি হলো ঈমান।
মানবজাতির মূল বিভাজন বিশ্বাসের ভিত্তিতে
আল্লাহ বলেন,
“হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার।”
— (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১৩)
তবে মূল শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেন,
“তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কতক কাফের এবং কতক মুমিন।”
— (সুরা তাগাবুন, আয়াত ২)
অতএব, মানুষের প্রকৃত পরিচয় ঈমান ও কুফরের ভিত্তিতে নির্ধারিত। এমনকি নবীর সন্তানও যদি ঈমানহীন হয়, তবে কোরআনে তাকে নবীপরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি—যেমন নূহ (আ.)-এর সন্তান। (সুরা হুদ, আয়াত ৪৫–৪৬)
ইবরাহিম (আ.)-ও তাঁর পিতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন শুধুমাত্র আল্লাহর সঙ্গে কুফরের কারণে। (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত ৪)
অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্কের সীমা
ইসলামে অমুসলিমদের সঙ্গে সামাজিক ও মানবিক সম্পর্ক বৈধ, তবে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“হে মুমিনরা, ইহুদি-নাসারাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না... যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই একজন।”
— (সুরা মায়েদা, আয়াত ৫১)
তাই মুসলিম ও কাফের একে অপরের উত্তরাধিকারীও হতে পারে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“কোনো মুসলিম কাফেরের ওয়ারিশ হবে না, আর কোনো কাফের কোনো মুসলিমের ওয়ারিশ হবে না।”
— (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৪০১৮)
অমুসলিমদের প্রতি ন্যায্য আচরণের নির্দেশ
ইসলাম অমুসলিমদের প্রতিও ন্যায়বিচার ও সদ্ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
“কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের ইনসাফ করতে বাধা না দেয়। তোমরা ইনসাফ করো, তা তাকওয়ার নিকটতর।”
— (সুরা মায়েদা, আয়াত ৮)
আরও বলেন,
“যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় আচরণে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না।”
— (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত ৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করেছেন,
“যে কোনো চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের ওপর জুলুম করবে বা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কেয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবো।”
— (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ৩০৫২)
মানবসম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ঈমান। বংশ, জাতি, ভাষা বা পেশা নয়, বরং বিশ্বাসই মানুষকে প্রকৃত অর্থে একত্রিত করে। তবে ইসলামী নির্দেশনা হলো—অমুসলিমদের সঙ্গেও ন্যায়, সদাচার ও মানবিক আচরণ বজায় রাখা, কারণ ইসলাম ন্যায় ও দয়া—দুইয়েরই ধর্ম।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: