মহান আল্লাহ পৃথিবীতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য মানুষকে ধনী ও দরিদ্র—এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। আল্লাহ যাদেরকে সম্পদ দান করেছেন, তাদের ওপর দিয়েছেন বিশেষ দায়িত্ব। আর যাদেরকে দারিদ্র্যের জীবন দান করেছেন, তাদের জন্য পরকালে রেখেছেন অসংখ্য পুরস্কার ও মর্যাদা।
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ধৈর্যশীল দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য বহু সুসংবাদ দিয়েছেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো—
১. ধনীদের আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন দরিদ্ররা
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন— একদল নিঃস্ব মুহাজির কোরআন পাঠ শুনছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের কাছে এসে বললেন,
“যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন ধৈর্যশীল মানুষ রেখেছেন, যাদের সঙ্গে আমাকেও ধৈর্য ধারণের আদেশ দিয়েছেন।”
এরপর নবীজি (সা.) বলেন— “হে নিঃস্ব মুহাজিররা! তোমাদের জন্য কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ। তোমরা ধনীদের চেয়ে অর্ধ দিবস আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই অর্ধ দিবসের পরিমাণ হলো পাঁচশ বছর।”
— (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৬৬)
২. জান্নাতে দরিদ্ররাই থাকবে সংখ্যাগরিষ্ঠ
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা.) থেকে বর্ণিত— নবীজি (সা.) বলেছেন, “আমি জান্নাতে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলাম, এর অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র। আর জাহান্নামে উঁকি দিয়ে দেখলাম, অধিকাংশ অধিবাসী নারী।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫৪৬)
অর্থাৎ ধৈর্যশীল ও আল্লাহভীরু দরিদ্ররাই পরকালের সাফল্যে এগিয়ে থাকবেন।
৩. নবীজি (সা.)-এর জীবনও ছিল দারিদ্র্যের প্রতীক
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন— “মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবার মদিনায় আসার পর থেকে এক নাগাড়ে তিন দিন গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খায়নি। আর এ অবস্থায় তাঁর ওফাত হয়।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৪)
তিনি আরও বলেন— “মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবার একদিনে দুই বেলা খাবার খেলে, তার এক বেলা কেবল খেজুর খেয়ে কাটাতেন।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৫)
নবীজির জীবনযাপনই ছিল বিনয়, সংযম ও দারিদ্র্যের মধ্যেও সন্তুষ্টির উদাহরণ।
৪. দরিদ্ররা অন্যদের জীবিকা অর্জনের মাধ্যম
আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “তোমরা দুর্বল লোকদের খুঁজে আমার কাছে নিয়ে এসো। কেননা, তোমরা তোমাদের দুর্বল লোকদের উসিলায় জীবিকা ও সাহায্য লাভ করো।”
— (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫৯৪)
অর্থাৎ সমাজে দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণিই আল্লাহর রহমত ও বরকতের মাধ্যম।
৫. দারিদ্র্য নবীপ্রেমের আলামত
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) বলেন— এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
নবীজি (সা.) তিনবার জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি যা বলছ তা ভেবে বলো?”
লোকটি বলল, “হে আল্লাহর রাসুল! আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।”
তখন নবীজি (সা.) বললেন— “যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তবে দারিদ্র্যের জন্য প্রস্তুত থাকো। কারণ, যে আমাকে ভালোবাসে, দারিদ্র্য তার দিকে এমন দ্রুতগতিতে আসে, যেমন স্রোত তার শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়।”
— (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৫০)
দারিদ্র্য ইসলামে অপমান নয়; বরং এটি ধৈর্য, ত্যাগ ও ঈমানের পরীক্ষার প্রতীক। ধৈর্যশীল দরিদ্র ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্যশীল ও সন্তুষ্টচিত্তে জীবনযাপনের তাওফিক দিন। আমিন।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: