জীবনের প্রতিটি পর্বেই মানুষকে পাড়ি দিতে হয় নানা পরীক্ষা ও বিপদের পথ। কেউ রোগে কষ্ট পান, কেউ প্রিয়জন হারিয়ে বেদনায় ভোগেন, আবার কেউ সংসারের অভাবে বিপর্যস্ত হন। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এসব কষ্ট নিছক দুর্ভাগ্য নয়—বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান রহমত এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির উপায়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “মুমিন নারী-পুরুষের ওপর, তার সন্তান ও ধন-সম্পদের ওপর বিপদ-আপদ লেগেই থাকে; শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হয় যে, তার ওপর কোনো গুনাহ থাকে না।” (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৯)।
বিপদে লুকিয়ে থাকা রহমত
মানুষের দৃষ্টিতে বিপদ মানে ক্ষতি, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে এটি হতে পারে পবিত্রতার অগ্নিপরীক্ষা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, প্রাণ ও ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সুরা বাকারাহ : ১৫৫)।
অর্থাৎ কষ্ট আল্লাহর অপ্রসন্নতার নিদর্শন নয়, বরং এটি মুমিনদের আত্মশুদ্ধির সুযোগ।
বিপদে মুমিনের প্রতিক্রিয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনের ব্যাপার কতই না বিস্ময়কর! তার সব অবস্থাই কল্যাণকর—সুখে থাকলে কৃতজ্ঞ হয়, কষ্টে পড়লে ধৈর্য ধারণ করে; উভয় অবস্থাই তার জন্য মঙ্গল।” (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)।
অতএব, সফল জীবন মানেই কষ্টহীনতা নয়; বরং ধৈর্য ও সন্তুষ্টির জীবনই আল্লাহর কাছে প্রকৃত সফলতা।
বিপদ-আপদ গুনাহমুক্তির পথ
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, “কোনো মুসলিম যখন কষ্ট, ব্যাধি, দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা যন্ত্রণা ভোগ করে—এমনকি একটি কাঁটাও যখন তার বিঁধে যায়—আল্লাহ তাতে তার কিছু গুনাহ মোচন করে দেন।” (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)।
অর্থাৎ মুমিনের প্রতিটি অশ্রুবিন্দু বৃথা যায় না; প্রতিটি ব্যথাই তার গুনাহ মোচনের সাক্ষী হয়ে থাকে।
কষ্টে লুকিয়ে আনন্দের রহস্য
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, “আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তাঁকে পরীক্ষা দেন। কষ্টের মাধ্যমেই বান্দা তার রবের কাছে ফিরে আসে, আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং গুনাহ দূর হয়।” (আল-ফাওয়ায়িদ, পৃ. ৮৭)।
নবী-রাসুলদের জীবনে পরীক্ষার ঐতিহ্য
মহানবী (সা.) বলেছেন, “সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা আসে নবীদের ওপর, তারপর যারা তাদের নিকটতম অনুসারী, তাদের ওপর।” (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৮)।
ইউসুফ (আ.)-এর কারাবাস, আইয়ুব (আ.)-এর দীর্ঘ ব্যাধি, ইয়াকুব (আ.)-এর দৃষ্টিহানি—সবই ছিল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য মর্যাদা বৃদ্ধির পরীক্ষা।
ধৈর্যই সাফল্যের সেতুবন্ধ
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” (সুরা বাকারাহ : ১৫৩)।
এই ‘সঙ্গে থাকা’র অনুভূতিই মুমিনের অন্তরকে প্রশান্ত করে তোলে।
সুতরাং মুমিনের জীবনে বিপদ ধ্বংসের নয়, বরং পুনরুত্থানের সূচনা। কষ্টই তাকে করে তোলে গুনাহমুক্ত, পরিশুদ্ধ ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: