[email protected] সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

কীভাবে মূর্তি পূজার সূচনা হয়েছিলো?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৭

ফাইল ছবি

ইতিহাস সাক্ষী, মানবজাতি সবসময় স্রষ্টার সন্ধান ও উপাসনার চেষ্টায় নিয়োজিত থেকেছে। আদম (আ.)-এর সময় থেকে মানুষ একত্ববাদের পথে চললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কুসংস্কার ও ভুল ধারণার বিস্তার ঘটে। মূর্তিপূজা সেই বিভ্রান্তির অন্যতম উদাহরণ, যা মানুষকে একমাত্র আল্লাহর উপাসনা থেকে বিচ্যুত করেছিল।

নুহ (আ.)-এর জাতিই সর্বপ্রথম মূর্তিপূজার প্রবর্তন করে। তারা কিছু নেক ও ধার্মিক ব্যক্তির স্মৃতিতে তাদের মূর্তি নির্মাণ করে, কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় ধীরে ধীরে সেই মূর্তিগুলোকেই উপাসনা করতে শুরু করে। এসব মূর্তির নাম ছিল—ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসর।

পরবর্তীতে ইসলাম-পূর্ব যুগে আরব উপদ্বীপে মূর্তিপূজা চালু করেন আমর ইবনে লুহাই আল খুজাই। তার আগ পর্যন্ত আরবরা নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রচারিত তাওহিদের ধর্ম অনুসরণ করত। আমর ইবনে লুহাই ছিলেন মক্কার এক প্রভাবশালী নেতা, দানশীল ও ধর্মপ্রেমী ব্যক্তি। তার ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতার কারণে মানুষ তাকে গভীর শ্রদ্ধা করত এবং শেষ পর্যন্ত কাবার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও তার হাতে আসে।

তবে এক সফরে সিরিয়া গিয়েই তার চিন্তায় পরিবর্তন আসে। সেখানে তিনি দেখেন, মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তি পূজা করছে। তিনি মনে করেন, এই মূর্তিগুলো মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। দেশে ফিরে তিনি মক্কায় প্রথম মূর্তি “হুবাল” নিয়ে আসেন এবং সেটি কাবার ভেতরে স্থাপন করেন। এরপর আরবরা ধীরে ধীরে মূর্তিপূজায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

আরব উপদ্বীপে হুবালের পাশাপাশি আল-লাত, আল-উজ্জা ও মানাত নামের মূর্তিগুলোও প্রসিদ্ধ হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন,

“তোমরা কি আল-লাত, আল-উজ্জা এবং তৃতীয় মানাতকে ভেবে দেখেছো? তোমাদের জন্য কি পুরুষ এবং তাঁর জন্য নারী? এটি এক অন্যায় বিভাজন। এগুলো কেবল নাম, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছো; আল্লাহর পক্ষ থেকে এদের কোনো প্রমাণ প্রাপ্ত হয়নি।”
(সুরা নাজম, আয়াত ১৯–২৩)

এই মূর্তিপূজার প্রথা বহু শতাব্দী ধরে চলতে থাকে। পরবর্তীতে আল্লাহ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করেন, যিনি ইব্রাহিম (আ.)-এর তাওহিদের ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। নবী (সা.) মানুষকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে আহ্বান জানান।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমর ইবনে লুহাই সম্পর্কে বলেছেন,

“আমর ইবনে লুহাইকে তার নাড়িভুঁড়ি থেকে আগুনে টেনে নেওয়া হবে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫২১)

কারণ, তিনি প্রথম মানুষকে একত্ববাদ থেকে বিভ্রান্ত করে শিরকের পথে পরিচালিত করেছিলেন।মূর্তিপূজার সূচনা মানবজাতির তাওহিদী বিশ্বাসের ওপর বড় আঘাত ছিল। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সেই বিভ্রান্ত মানবতাকে আবার এক আল্লাহর উপাসনার পথে ফিরিয়ে আনে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর