[email protected] সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মানবাধিকারের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা দিয়েছে আল কোরআন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৮

ফাইল ছবি

আধুনিক যুগে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার—গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। কিন্তু আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ ঐশীগ্রন্থ আল কোরআনে এসব মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে।

ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ, মানুষের কর্তব্য রিজিকের অন্বেষণ এবং রাষ্ট্র বা সমাজপতিদের দায়িত্ব সে বিষয়ে সহযোগিতা করা। আল্লাহ বলেন, “হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সব কল্যাণ দান করেছি।” (সুরা কাওসার, আয়াত ১)

মানবকল্যাণের প্রতিটি দিক—ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন—নিয়ে রসুল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে এনেছেন পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর জীবনব্যবস্থা। কোরআন মানুষকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য শেখায়, ন্যায় ও আলোর পথে আহ্বান জানায় এবং অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়।

ইসলাম মানবাধিকারের এমন সীমা নির্ধারণ করেছে, যা মানুষের পুরো জীবনকে অন্তর্ভুক্ত করে—
বাবা-মার হক, বন্ধুদের হক, শ্রমিক-মালিকের হক, শাসক-জনগণের হক, দুর্বল ও অসহায়দের হক—সবই ইসলামের শিক্ষা।

ইসলামের বিশেষত্ব হলো, এটি মানুষকে অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার প্রদানে বেশি উৎসাহিত করে। কারণ কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে জবাব দিতে হবে অন্যের হক সম্পর্কে।

খাদ্যের অধিকার:

“পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন।” (সুরা হুদ, আয়াত ৬)

বস্ত্রের অধিকার:

“হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং পরহেজগারির পোশাক, সেটিই উত্তম।” (সুরা আরাফ, আয়াত ২৬)

বাসস্থানের অধিকার:

“আল্লাহ তোমাদের ঘরকে করেছেন অবস্থানের জায়গা এবং চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তাঁবুর ব্যবস্থা।” (সুরা আন নাহল, আয়াত ৮০)

শিক্ষার অধিকার:

“পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা আলাক, আয়াত ১-২)

চিকিৎসার অধিকার:

“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের জন্য ওষুধ এবং মুমিনদের জন্য রহমত।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮২)

রসুল (সা.) চিকিৎসার ক্ষেত্রেও উন্নত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা জয়তুনের তেল ব্যবহার কর, কেননা এটি কল্যাণকর বৃক্ষ।”
এছাড়া মধু, কালিজিরা, দুধ, খেজুর ও আদাসহ নানা প্রাকৃতিক উপাদানের উপকারিতা তিনি উল্লেখ করেছেন।

আইয়ামে জাহিলিয়ায় কন্যাসন্তান জন্মকে অভিশাপ মনে করা হতো, এমনকি জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হতো। কিন্তু রসুল (সা.) ঘোষণা দেন,

“কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক। অভাব থাকা সত্ত্বেও যিনি তাদের উত্তমরূপে লালনপালন করবেন, তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আড়াল হবে।” (বুখারি, মুসলিম)

মানবসমাজে বিদ্বেষ, বিভেদ ও কলহ দূর করতে রসুল (সা.) সর্বোত্তম ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মদিনা সনদ সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে সুদ, ঘুষ ও অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ। রসুল (সা.) বলেছেন, “যার দেহের মাংস হারাম খাদ্যে গঠিত হয়েছে, সে জাহান্নামের জন্য উপযুক্ত।” (বায়হাকি)

মানবজীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধির আদর্শ মডেল হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর জীবনবিধান ও আল কোরআনের শিক্ষা অনুসরণই পারে মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর