মানবজাতি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করলেও আজ সেই মানুষই পাশবিকতা, স্বার্থপরতা ও অহংকারে নিমজ্জিত। ফলে গোটাবিশ্ব এখন নৈতিক অধঃপতন, অশান্তি ও বিপর্যয়ের মুখে।
ইসলামি শিক্ষায় বলা হয়েছে— মানুষ ও পশুর পার্থক্য মনুষ্যত্বে, কিন্তু মানুষ যখন স্বার্থের দ্বন্দ্বে হিংস্র ও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে, তখনই আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করেছেন— “তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় করো, যা কেবল অত্যাচারীদের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।” (সুরা আনফাল, আয়াত ২৫)
আজ বিশ্বজুড়ে যে অস্থিরতা ও বিপর্যয় বিরাজ করছে, তা মানুষের কুকর্মেরই ফল।
“ভূমি ও জলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মানুষের কৃতকর্মের কারণে, যাতে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় কৃতকর্মের শাস্তি স্বাদগ্রহণ করান।” (সুরা রুম, আয়াত ৪১)
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন— “আমার পরে তোমরা ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখবে এবং অনেক বিষয় তোমাদের অপছন্দ হবে।” (বুখারি)
তিনি আরও বলেন— “এক সময় আসবে, যখন ইসলামের শুধু নাম থাকবে, কোরআনের শুধু অক্ষর থাকবে। তাদের মসজিদগুলো বাহ্যিকভাবে সুন্দর হবে, কিন্তু হিদায়াতশূন্য থাকবে। তাদের আলিমগণ হবে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট; তাদের মাধ্যমেই ফিতনা সৃষ্টি হবে।” (মিশকাতুল মাসাবিহ)
প্রিয়নবী (সা.) সতর্ক করেছেন, “যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যাধি দেখা দেয় যা তাদের পূর্বপুরুষেরা কখনও দেখেনি।” (দায়লামি)
আরও বলেন, “সেসময়ে অপেক্ষা করো রক্তিম ঝড়, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, রূপ বিকৃতি, পাথরবৃষ্টি এবং একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য।” (তিরমিজি)
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “খাদ্য গ্রহণকারীরা যেমন পাত্র ঘিরে বসে, তেমনিভাবে শত্রুরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে। তোমরা সংখ্যা বেশি হলেও মূল্যহীন হবে— কারণ তোমাদের অন্তরে ভীরুতা (দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুভয়) ভর করবে।” (আবু দাউদ)
নবী করিম (সা.) আরও বলেন—“মানুষের হৃদয়ে একের পর এক ফিতনার প্রাদুর্ভাব ঘটবে। যে হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তাতে কালো দাগ পড়বে; আর যে বিরোধিতা করবে, তা সাদা ও আলোকিত হবে। শেষ পর্যন্ত হৃদয় দুই প্রকারে বিভক্ত হবে— একদল সত্যে অটল, অন্যদল অন্ধকারে নিমজ্জিত।” (মুসলিম)
অবক্ষয়ের এ অন্ধকারে মানবতার আর্তনাদে ভারি হচ্ছে আকাশ-বাতাস। কবি জসিম উদ্দীন যেমন লিখেছেন—“চারিদিক হতে গ্রাসিয়াছে তারে নিদারুণ আন্ধার,
স্তব্ধতা যেন জমাট বেঁধেছে ক্রন্দন শুনে তার।”
(মুসাফির)
তাই এখনই ফেরা দরকার আল্লাহর পথে। নবী করিম (সা.) বলেন—
“প্রত্যেক আদমসন্তান ভুল করে; কিন্তু যারা তাওবা করে, তারাই উত্তম।” (তিরমিজি)
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: