[email protected] সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

অহংকার নয়, অনুতাপই আল্লাহর কাছে প্রিয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০১

ফাইল ছবি

মানুষের চোখে ইবাদতকারী মানে সফল, আর গোনাহগার মানে ব্যর্থ। কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে বিষয়টি এত সরল নয়। বাহ্যিকভাবে ইবাদত যত সুন্দরই হোক, যদি তার অন্তরে অহংকার জন্ম নেয়, তবে সেই ইবাদতই হয়ে যেতে পারে ধ্বংসের কারণ। অপরদিকে যে মানুষ নিজের গোনাহে কাঁদে, লজ্জিত হয়, আল্লাহর দরবারে বিনম্র হয়ে ফিরে আসে—তার সেই অনুতাপই হতে পারে মুক্তির চাবিকাঠি।

ইবাদতের আসল অর্থ হলো আল্লাহর সামনে বিনয় প্রদর্শন। কিন্তু যখন ইবাদতই অহংকারের উৎস হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা আর ইবাদত থাকে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“তোমরা নিজেদের পবিত্র বলে মনে করো না; কে বেশি তাকওয়াবান তা আল্লাহই ভালো জানেন।”
(সুরা আন-নাজম, আয়াত: ৩২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তার অন্তরে এক কণামাত্র অহংকার রাখে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)

ইমাম গাজালী (রহ.) বলেন, “অহংকারী ইবাদতকারী যেন এমনভাবে ইবাদত করে, যেন সে আল্লাহকে ঋণ দিচ্ছে; অথচ সে ভুলে যায়, আল্লাহ তার অস্তিত্বকেই অনুগ্রহ হিসেবে দিয়েছেন।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)

গোনাহগার যে ব্যক্তি নিজের পাপের জন্য কাঁদে ও অনুতপ্ত হয়, সে আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন তওবাকারী এবং যারা নিজেদের পবিত্র রাখে।”
(সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে গোনাহ করে, তারপর আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়, সে এমন যেন কোনো গোনাহই করেনি।”
(ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪২৫০)

ইবাদত বা পাপ—দুটিরই মূল্যায়ন বাহ্যিকভাবে নয়, বরং অন্তরের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“আল্লাহ তোমাদের রূপ ও সম্পদ দেখেন না; তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।”
(মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)

হাসান বসরী (রহ.) বলেন, “তুমি যদি কাউকে গোনাহে দেখতে পাও, তাকে অবজ্ঞা করো না; হতে পারে সে তার পাপের অনুতাপে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাবে, আর তুমি তোমার অহংকারের কারণে ধ্বংস হবে।”

সে নিজেকে ছোট মনে করে, আর আল্লাহ বড়কে ভালোবাসেন না।

তার চোখে গোনাহ বড়, আমল ছোট—এটাই তাওবার নিদর্শন।

সে আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে আসে, অহংকারী ইবাদতকারী দূরে সরে যায়।

সে পাপের পরেও আল্লাহর দরজায় মাথা নত করে, অহংকারী নিজ আমলে গর্ব করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “কোনো ব্যক্তির আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না... যদি না আল্লাহ তাকে তাঁর অনুগ্রহে ঢেকে দেন।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৮৬)

অহংকার আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত, আর বিনয় সবচেয়ে প্রিয়। অহংকারী ইবাদতকারী তার ইবাদতের মাধ্যমেই জান্নাত থেকে দূরে সরে যায়; কিন্তু ভীত গোনাহগার নিজের কান্না ও অনুতাপে জান্নাতের দরজায় পৌঁছে যায়।

আল্লাহর কাছে ভগ্ন হৃদয়ই সবচেয়ে উঁচু।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর