অনশন অর্থ উপবাস বা খাদ্য থেকে বিরত থাকা। তবে খাদ্যাভাবে উপবাস অনশন নয়—এটি দারিদ্র্যজনিত সামাজিক সমস্যা। ইতিহাসে দেখা যায়, প্রাচীন ও মধ্যযুগে প্রায় সব ধর্মেই অনশন ছিল একধরনের ধর্মীয় আচার। পরে ধর্মীয় অনশন থেকেই রাজনৈতিক অনশনের ধারণা এসেছে। হিন্দুধর্মে পূজা-পার্বণের আগে কিংবা কোনো ব্রত পালনের লক্ষ্যে স্বল্পানশন, অর্ধানশন ও পূর্ণানশনের প্রচলন রয়েছে।
অনশন দীর্ঘস্থায়ী হলে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন রক্ষা করা ফরজ—তাই এমন অনশন সম্পূর্ণ haram বা নিষিদ্ধ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,“তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।” (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯)
আরও বলা হয়েছে, “তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)
ইসলামি ফিকহবিদ আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আবি সৌদ (রহ.) তাঁর ফাতহুল মঈন গ্রন্থে বলেন, “মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা ফরজ।”
একইভাবে ফাতাওয়া আলমগীরী-তেও বলা হয়েছে, “যতটুকু খেলে জীবন রক্ষা পায়, ততটুকু খাওয়া ফরজ। কেউ যদি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় এবং তাতে মারা যায়, তবে সে অপরাধী।”
অতএব, খাওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না খাওয়া এবং তাতে মৃত্যু ডেকে আনা ইসলামে আত্মহত্যার সমান—যা জঘন্য গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সেই বস্তু দ্বারা শাস্তি দেবেন।” (মুসলিম, হাদিস: ২০৪)
আরেক হাদিসে এসেছে, “যে লৌহ অস্ত্র বা বিষ দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে কিয়ামতের দিন সেই অস্ত্র বা বিষসহ জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে।” (তিরমিজি, হাদিস: ২০৪৪)
ইসলাম জীবনের ভারসাম্য ও সংযমকে গুরুত্ব দেয়। তাই প্রতিবাদের নামে বা দাবি আদায়ের জন্য নিজের শরীর ও প্রাণের ক্ষতি করা ইসলাম অনুমোদন করে না। এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কঠোরতা বা বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানানো হলো যে তিনি নিরবচ্ছিন্ন রোজা ও ইবাদতের প্রতিজ্ঞা করেছেন। তখন নবী (সা.) বললেন,
“সওমও পালন কর, ইফতারও কর; রাতে ইবাদতও কর, ঘুমাওও—সেই শক্তি তোমার নেই।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪১৮)
ইসলাম মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও ভারসাম্য রক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। তাই কোনো দাবি আদায় বা প্রতিবাদ প্রকাশের জন্য খাবার না খেয়ে অনশন করা ইসলামসম্মত নয়; বরং এটি আত্মঘাতী কর্ম—যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন সংরক্ষণই সর্বোচ্চ দায়িত্ব।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: