দৈনন্দিন জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নতগুলো শুধু ইবাদত নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গভীর উপকারী ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও বলেন, সুন্নতের অনুসরণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। নিচে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এমন ১০টি সুন্নত তুলে ধরা হলো—
১. খাওয়ার আগে–পরে হাত ধোয়া ও কুলি করা
সহিহ বুখারি (হাদিস ২৮৮) অনুযায়ী নবীজি (সা.) খাওয়ার আগে-পরে হাত ধুতেন এবং খাওয়ার পর কুলি করতেন।
উপকার: জীবাণুমুক্ত থাকা, হজম শক্তি বাড়ানো, দাঁত ও মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখা।
২. খাদ্য গ্রহণে সংযম
তিরমিজির হাদিসে (২৩৮০) এসেছে, অতিভোজন থেকে বারণ এবং পাকস্থলী তিন ভাগে ভাগ রাখার নির্দেশ।
উপকার: স্থূলতা, গ্যাস্ট্রিক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
৩. মিসওয়াক করা
নবীজি (সা.) প্রতিবার অজুর আগে, ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক ব্যবহার করতেন।
উপকার: দাঁত-মাড়ি শক্ত করে, পাকস্থলীর রোগ কমায়, হজমে সহায়তা করে।
৪. সকালে হাঁটা
নবীজি (সা.) ভোরের নির্মল বাতাসে হাঁটতে উৎসাহ দিতেন (মুসনাদে আহমদ ১৬৫৫৩)।
উপকার: অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি, হৃদরোগ প্রতিরোধ, ভিটামিন–ডি গ্রহণ, মানসিক সতেজতা।
৫. কায়লুলা—দুপুরের বিশ্রাম
সহিহ বুখারি (৯৪১) ও অন্যান্য হাদিসে কায়লুলার গুরুত্ব এসেছে।
উপকার: মানসিক চাপ কমায়, মনোযোগ বাড়ায়, শরীরকে সতেজ করে।
৬. ডান পাশে ঘুমানো
নবীজি (সা.) ডান কাতে শোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারি ২৪৭)।
উপকার: হৃদপিণ্ড ও পাকস্থলীতে চাপ কমায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি ঘটায়।
৭. তেল ব্যবহার করা
নবীজি (সা.) চুল ও শরীরে নিয়মিত তেল ব্যবহার করতেন এবং বিশেষভাবে জয়তুন তেল ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
উপকার: ত্বক মসৃণ রাখে, চুল পুষ্ট করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৮. বসে পানি পান করা
রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম ২০২৫)।
উপকার: পানি শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হয়, কিডনি ও পাকস্থলীর ক্ষতি কমায়।
৯. হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা
আবু দাউদের হাদিসে (৫০২৯) আছে, নবীজি (সা.) হাঁচির সময় হাত বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকতেন।
উপকার: জীবাণু ছড়ানো কমে, সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
১০. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা
নখ কাটা, গোফ ছাঁটা, বগল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা—এসবকে ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে (নাসায়ি ৯)।
উপকার: ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ, ত্বক ও শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নবীজি (সা.)-এর এই সুন্নতগুলো শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে স্বাস্থ্যবান ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের এক অনন্য পথনির্দেশনা। দৈনন্দিন জীবনে এগুলো অনুসরণ করা দেহ, মন ও আত্মিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: