মানুষের জীবনে সুখ–দুঃখ, উত্থান–পতন, পাপ–পুণ্য সবই স্বাভাবিক বাস্তবতা। কিন্তু একজন মুমিনের হৃদয় স্থির হয় আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান, তাঁর অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা এবং তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টির মাধ্যমে।
কষ্ট–দুর্দশা তাকে ভেঙে ফেলতে পারে না, হতাশাও করে না। কুরআন, হাদিস ও সাহাবাদের জীবন আমাদের শেখায়—ভুল করলে দ্রুত তওবা করতে, বিপদে ধৈর্য ধরতে এবং নিয়ামতে কৃতজ্ঞ হতে। এসবই মুমিনের অন্তরকে জীবন্ত করে তোলে ও আল্লাহর নৈকট্যের পথে পরিচালিত করে।
সহিহ বুখারিতে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন তার পাপকে দেখে যেন পাহাড় ধসে পড়বে—এমন ভয়ে থাকে; আর পাপী পাপকে দেখে নাকের ওপর বসা মাছির মতো তুচ্ছ মনে করে। অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, তওবা করা বান্দার ওপর আল্লাহ এতটাই আনন্দিত হন, যেমন মরুভূমিতে হারানো বাহন ফিরে পেয়ে একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ আনন্দিত হয়।
সহিহ বুখারিতে আরও এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রতিদিন ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন ও তওবা করতেন। চেষ্টাই সফলতা এনে দেয়—কুরআনে বলা হয়েছে, “যারা আমাদের পথে সংগ্রাম করে, আমরা অবশ্যই তাদেরকে আমাদের পথে পরিচালিত করি।” (সুরা আনকাবুত: ৬৯)
সাহাবি হানজালা (রা.)-এর ঘটনাও মানুষকে শিক্ষা দেয়—জীবনে ইবাদত ও দুনিয়ার কাজ—দুটোরই সময় আছে। সবসময় একই আধ্যাত্মিক অবস্থায় থাকা মানুষের জন্য সম্ভব নয়। তাই জীবনে ভারসাম্য রাখা জরুরি।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, যারা দুনিয়ায় সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল, আর ধৈর্যশীলদের প্রতিদান অসীম। আরও বলেছেন—ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ–জীবন–ফসলের ক্ষতি দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করা হবে। ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (সুরা বাকারা: ১৫৫)।
রাসুল (সা.) বলেছেন—মুমিনের প্রতিটি অবস্থাই কল্যাণময়। সুখ পেলে কৃতজ্ঞ হয়, আর বিপদে ধৈর্য ধরে—দুটোই তার জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।
অতএব আল্লাহর প্রতি ভরসা, তাঁর তাকদিরে সন্তুষ্টি, রহমতের ওপর আশা এবং অন্তরের বক্রতা থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা—এসবই মুমিনকে জীবনের কঠিন পরীক্ষায় স্থির রাখে। দুঃখ–কষ্টে ধৈর্য ও সুখে কৃতজ্ঞতা—মুমিনের জীবনকে আলোকিত করে। যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে—আল্লাহ তার পথ সহজ করে দেন। এটিই মুমিনের প্রকৃত সফলতা।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: