সাম্প্রতিক আকস্মিক ভূমিকম্প মানুষের হৃদয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে—মুহূর্তের মধ্যে বহু প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির এই ঘটনাকে অনেকে নিছক বস্তুবাদী ব্যাখ্যায় দেখছেন। তবে ইসলামি দৃষ্টিতে এ ধরনের বিপর্যয় শুধু প্রাকৃতিক ঘটনা নয়; এতে রয়েছে শিক্ষা, সতর্কতা ও আত্মসমালোচনার আহ্বান।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, অতীতের বহু দৃষ্টান্ত পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে—যারা সত্য অস্বীকার করেছিল তাদের পরিণতি ভ্রমণকারী মানুষকে শিক্ষা দেয় (আলে ইমরান ১৩৭-১৩৮)। তবুও গাফেল মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো—আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে উপেক্ষা করা। কোরআনের বর্ণনায় বলা হয়েছে, তাদের হৃদয় উদাসীনতায় বিভ্রান্ত থাকে (অম্বিয়া ১-৩)।
ইতিহাসে ‘আদ’ জাতি, কারুন ও বহু সম্প্রদায় আল্লাহর সতর্কতা অগ্রাহ্য করায় ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে। কেউ শাস্তির মেঘকে ভেবেছিল বৃষ্টির মেঘ, কেউ বলেছিল আকাশ থেকে পতিত বস্তু ‘স্রেফ মেঘ’, আবার কেউ বিশ্বাস করেছিল নিজের জ্ঞানেই সে নিরাপদ। কোরআনের এসব আয়াত মনে করিয়ে দেয়—আল্লাহর ইচ্ছার সামনে পাহাড়ও নিরাপত্তা দিতে পারে না (আহকাফ ২৪-২৫; হুদ ৪৩)।
ইসলামি দৃষ্টিতে ভূমিকম্প বা অন্যান্য বিপর্যয় কেবল জালিমদের ওপর আসে না; এটি পুরো সমাজের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ তাআলা বলেন, এমন ফিতনা থেকে সাবধান হও, যা শুধু জালিমদের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে না (আনফাল ২৫)। যখন সমাজে পাপ, দুর্নীতি, অশ্লীলতা ও আল্লাহর আইনকে উপহাস করা ব্যাপক হয়ে যায়, তখন শাস্তির দরজাও উন্মুক্ত হয়।
অনেকে প্রশ্ন তুলেন—পশ্চিমা দেশগুলোতে নৈতিক অবক্ষয় বেশি, কিন্তু তারা তো এ ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হয় না! ইসলামি ব্যাখ্যায় বলা হয়—কখনো কখনো আল্লাহ অবকাশ দেন, সমৃদ্ধি বাড়িয়ে দেন, যাতে মানুষ বিভ্রান্তির গভীরে আরেকটু ডুবে যায়। একসময় হঠাৎ পাকড়াও আসে (আনআম ৪৪)।
মুমিনদের জন্য সংকটের বার্তা ভিন্ন—এটি শাস্তি নয়, বরং সতর্কতা ও ফিরে আসার সুযোগ। আল্লাহ বলেন, মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে-জলে বিপর্যয় ঘটে, যাতে তারা ফিরে আসে (রুম ৪১)।
হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) আগে থেকেই সতর্ক করেছেন—এক সময় জ্ঞান কমবে, অজ্ঞতা বাড়বে, ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে এবং সম্পদ বেড়ে গেলেও গুরুত্ব দেওয়া হবে না; তখন কিয়ামতের সময় নিকটবর্তী হবে (বুখারি ৭১২১)।
ইসলামি দৃষ্টিতে ভূমিকম্প আমাদের জন্য আত্মসমালোচনার সময়—আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার, তাওবা ও সংশোধনের সুযোগ।
আলোকিত গৌড়/আ
মন্তব্য করুন: