[email protected] শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
৪ পৌষ ১৪৩২

ইসলামে অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার প্রদানের ওপর বেশি গুরুত্ব

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮

ফাইল ছবি

ইসলাম মানুষের কাছ থেকে অধিকার আদায়ের চেয়ে বরং অন্যের অধিকার প্রদানের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অন্যের হক ও অধিকার আদায়ের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে, কারণ কেয়ামতের দিন এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে—এমন বিশ্বাস ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।

আধুনিক বিশ্বে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব মৌলিক অধিকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এসেছে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অবতীর্ণ ঐশীগ্রন্থ আল কোরআনে।

ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, রিজিকের একমাত্র মালিক আল্লাহ। মানুষের দায়িত্ব হলো রিজিক অন্বেষণ করা এবং রাষ্ট্র ও সমাজপতিদের কর্তব্য হলো এ বিষয়ে সহযোগিতা করা।

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য। তিনি ছিলেন মানবকল্যাণের জীবন্ত প্রতীকপবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী)! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সব কল্যাণ দান করেছি’ (সুরা কাওসার: ১)। মানবজীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকঅর্থনৈতিকসব ক্ষেত্রে কল্যাণ নিশ্চিত করতে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা উপহার দিয়েছেন

কোরআন মানুষকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য শেখায় এবং কল্যাণ ও আলোর পথে পরিচালিত করে। পাশাপাশি মানুষের অধিকার আদায়ে সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।

ইসলাম মানবাধিকারের পরিধিকে এতটাই বিস্তৃত করেছে যে, পুরো জীবনই এর আওতায় চলে আসে। পিতা-মাতার হক, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর হক, শ্রমিক ও মালিকের হক, শাসক ও জনগণের হক, দুর্বল ও অসহায় মানুষের হকসবকিছুর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ইসলামে রয়েছে।

ইসলামের মূল শিক্ষা হলোআল্লাহর হক ও বান্দার হক যথাযথভাবে আদায় করা। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আল কোরআনে স্পষ্ট বিধান এসেছে।

খাদ্যের বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেছেন’ (সুরা হুদ: ৬)।

বস্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য বর্ধন করে’ (সুরা আরাফ: ২৬)।

বাসস্থানের ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ঘরকে করেছেন অবস্থানের জায়গা’ (সুরা নাহল: ৮০)।

শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম অহিই ছিল, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে’ (সুরা আলাক: ১)।

চিকিৎসা সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের জন্য আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য রহমত’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮২)।

রসুলুল্লাহ (সা.) চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ দিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি মধু, জয়তুনের তেল, কালিজিরা, খেজুর, দুধসহ নানা উপকারী খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

নারীর কল্যাণে ইসলাম যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। আইয়ামে জাহেলিয়াতে কন্যাসন্তানকে অবহেলা ও হত্যা করা হতো। রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক। অভাব থাকা সত্ত্বেও কন্যাসন্তানকে লালন-পালন করলে তা জান্নাত লাভের কারণ হবে (বুখারি ও মুসলিম)।

সামাজিক কল্যাণে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও বিভেদ দূর করতে রসুল (সা.) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো মদিনা সনদ।

ইসলাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও মানবকল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সুদ, ঘুষ ও অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ এসব কর্মকাণ্ড সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর