[email protected] বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
১৭ পৌষ ১৪৩২

জানাজা নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৬

সংগৃহিত ছবি

কোনো মুসলমান মারা গেলে জানাজার নামাজ আদায় শেষে তাকে দাফন করা হয়। ইসলামে জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ সমাজের কিছু মানুষ এ নামাজ আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়, আর কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হয়। এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার জন্য দোয়া করা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) জানাজার নামাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মৃতের জানাজার নামাজ আদায় পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে, সে এক কিরাত সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত থাকবে, সে দুই কিরাত সওয়াব লাভ করবে। সাহাবারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দুই কিরাত দুটি বিশাল পর্বতসম সওয়াবের সমান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩২৫)

জানাজার নামাজের প্রতি ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য মুমিনদের সুপারিশ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কোনো মুমিন যখন দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহর সামনে হাজির হয়, তখন জানাজার দোয়াগুলো তার পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমানের জানাজায় যদি এমন ৪০ জন উপস্থিত থাকে যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, তবে আল্লাহ তাদের দোয়া মৃত ব্যক্তির পক্ষে কবুল করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৮৮)

ইসলামি মনীষীরা বলেন, মৃত্যুর পরও আত্মার অনুভূতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় না। এই সময়ে জীবিতদের দোয়া ও সদকা মৃত ব্যক্তির জন্য উপকার বয়ে আনে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সে বিশেষ বার্তা ও প্রশান্তি লাভ করে। জানাজার নামাজ সেই দোয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

মুমিনদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় না। এজন্য জানাজায় অংশ নেওয়াকে মুসলিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে জানাজার অনুসরণ করাও অন্তর্ভুক্ত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৪০)

জানাজার নামাজ মুমিনদের মধ্যে ক্ষমাশীলতার শিক্ষা দেয়। এ নামাজে জীবিত ও মৃত সবাইকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়, যা পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি করে।

এ ছাড়া জানাজায় অংশগ্রহণ জীবিতদের মনে মৃত্যুর বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দেয়। মৃত্যু স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। এক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক জানাজায় উপস্থিত হয়ে কবরের পাশে বসে কান্না করেন এবং বলেন, তোমাদের পরিণতিও এমনই হবে—অতএব তোমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১৯৫)

জানাজার নামাজ তাই শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি মৃতের জন্য দোয়া, জীবিতের জন্য শিক্ষা এবং সমাজের ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

আল্লাহ সবাইকে উত্তম জীবন ও উত্তম পরিণতি দান করুন। আমিন।

আলোকিত গৌড়/আ

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর